হাসপাতালে ‘অবহেলা’, শবর রোগীকে ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে

শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক নার্স প্রথম দেখেন, শ্যামল নেই। শোরগোল পড়ে যায় হাসপাতালে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা মানছেন, ‘‘লালগড়ের ওই রোগীর খোঁজ মিলছিল না। পরে ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে শ্যামল শবর। নিজস্ব চিত্র

উন্নত চিকিৎসার জন্য এক যক্ষ্মা আক্রান্তকে ঝাড়গ্রাম থেকে ‘রেফার’ করা হয়েছিল মেদিনীপুরে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে শয্যা জোটেনি। ঠাঁই হয়েছিল মেঝেতে। অভিযোগ, চিকিৎসাও হচ্ছিল না। ক্ষোভে তাই ছুটি না নিয়ে, কাউকে না বলেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেন লালগড়ের পূর্ণাপাণির বাসিন্দা শ্যামল শবর।

Advertisement

শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক নার্স প্রথম দেখেন, শ্যামল নেই। শোরগোল পড়ে যায় হাসপাতালে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা মানছেন, ‘‘লালগড়ের ওই রোগীর খোঁজ মিলছিল না। পরে ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।’’

শনিবার রাতেই প্রশাসনিক তৎপরতায় শ্যামলকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ বার তিনি ভর্তি হয়েছেন ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে। শয্যাও মিলেছে। রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, শুয়ে রয়েছেন শ্যামল। অক্সিজেন, স্যালাইন চলছে। শ্যামল বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুরে চিকিৎসা হয়নি। এখানে হচ্ছে।’’ ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটির সুপার মলয় আদকের বক্তব্য, ‘‘ওই যক্ষ্মা আক্রান্তের চিকিৎসার দিকে নজর রাখা হয়েছে।’’ আর চিকিৎসা না হওয়ার অভিযোগ মানেননি মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালের একটি দল গিয়ে ওই রোগীকে ঝাড়গ্রামে গিয়ে দেখে এসেছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আজ মমতার সঙ্গে বৈঠক, নবান্নে আসছেন চন্দ্রবাবু

লালগড়ে শবর মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ক’দিন আগেই পূর্ণাপাণির শবরপল্লির কয়েক জনকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে প্রশাসন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পূর্ণাপানির রাঙামেট্যার বাসিন্দা বছর ছেচল্লিশের শ্যামল। প্রথমে তাঁকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতেই ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। গত শুক্রবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন শ্যামল। মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের পাশের মেঝেতে ঠাঁই হয় তাঁর। চিকিৎসকদের একাংশ মানছেন, এমন রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা অনুচিত। মেদিনীপুরে যক্ষ্মা রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডও রয়েছে। তা-ও কেন মেঝেতে ঠাঁই হল শ্যামলের? মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপারের জবাব, ‘‘রোগীর ভিড় থাকে। আর কিছু ক্ষণ থাকলেই হয়তো উনি শয্যা পেতেন।’’ শনিবার শ্যামলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁর মেয়ে সুদীপা শবর। তারপর দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল ছেড়ে চলে যান শ্যামল। সুদীপা বলেন, ‘‘বাবা মেদিনীপুরের হাসপাতালে থাকতে চাইছিলেন না। বলছিলেন এখানে থাকলে মরে যাব, বাঁচব না। ডাক্তার নেই। কোনও কিছুই নেই। আমাকে বাড়ি নিয়ে চল। পরে নিজেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়েন।’’

তত ক্ষণে লালগড়ের এই রোগীর খোঁজ শুরু হয়েছে। যোগাযোগ করা হয় সুদীপার সঙ্গে। পরে ফের লালগড়ে যায় প্রশাসনের দল। শ্যামলকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়।

কিন্তু সকলের নজর এড়িয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে কী ভাবে শ্যামল চলে গেলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তির বক্তব্য, ‘‘আসলে কাউকে না জানিয়েই উনি হাসপাতাল থেকে চলে যান। পরে বোঝা মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ রোগী ‘কাউকে না জানিয়েই’ হাসপাতাল থেকে চলে যান কী করে, সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement