‘আজ না হয় আপনারাই বলুন, আমি শুনি’

প্রত্যাশিত ভাবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন দলীয় কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪১
Share:

কর্মিসভায় অধীর চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

অধীর চৌধুরীর কর্মিসভা। প্রত্যাশিত ভাবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন দলীয় কর্মীরা। কিন্তু ‘দাদা’ মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জানিয়ে দিলেন, ‘‘প্রতিদিন তো আমিই বলি, আজকে বরং উল্টোটা হোক। আপনারা বলুন, আমি না হয় শুনি।’’

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে, বহরমপুরে রবীন্দ্র সদনে তখন কয়েক সেকেন্ড পিন পতনের নিস্তব্ধতা। তার পরে গুঞ্জন। এ-ওকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলছেন, ‘‘তুই বল’’, পাশের জন বলছেন, ‘‘না, না তুই বল!’’

খানিক স্তব্ধতার পরে হাত তুললেন এক জন। তাঁর দিকে মাইক্রোফোন এগিয়ে দেওয়া হল। শুরু করলেন, ‘‘দাদা বিজেপি’র অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। ৩৭০, ৩৫এ নিয়ে আমাদের বিব্রত করছে। এ নিয়ে আমরা কী বলব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ অধীর চুপ। বললেন, ‘‘ঠিক আছে, কিন্তু তার আগে, আর কার কী বলার আছে বলুন, শুনি।’’

Advertisement

জড়তা কেটেছে খা নিক। একে একে দলীয় কর্মীরা শুরু করলেন প্রশ্ন। আর দলের নেতারা তাঁদের কাছে ছুটে ছুটে এগিয়ে দিচ্ছেন মাইক্রোফোন। রেজিনগরের এক কর্মী বললেন, ‘‘আমরা প্রাণপাত করে, লড়াই করে বিধায়ক-সহ দলের বিভিন্ন প্রতিনিধিকে জয়ী করছি। কিন্তু তাঁদের কেউ কেউ অন্য দলের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন। এর কি কোনও প্রতিষেধক নেই!’’ দু’জন কর্মী প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘দলে বয়স্কদের সরিয়ে কবে যুবদের জায়গা দেওয়া হবে, বলুন না অধীরদা?’’

বহরমপুর শহরের এক মহিলা কংগ্রেস কর্মী আবার অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘নেতারা কর্মীদের গুরুত্ব দেন না। কর্মীরা গুরুত্ব না পেলে, ছোটদের জায়গা না দিলে দল কী ভাবে মজবুত হবে?’’ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দৌলতাবাদের বারবাকপুরে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা ঘোষ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তাদের বাড়িতে এক দল দুষ্কৃতী হামলা চালায়। কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের হামলার প্রিয়াঙ্কার শ্বশুর ও দেওর গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হন। এ দিন দর্শকের আসনে বসে থাকা প্রিয়াঙ্কাকে অধীর মঞ্চে ডেকে নিয়ে কীভাবে লড়াই করেছেন তা সকলের সামনে বলতে বলেন।

কর্মীদের প্রশ্ন শোনার পর অধীর বলতে শুরু করেন। কী ভাবে কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভারতভুক্ত করা হয়েছিল তুলে ধরেন সেই ইতিহাসও। তাঁর দাবি, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের উপস্থিতিতে সংসদে কাশ্মীরের ভারতভুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন।

অধীরের দাবি, ‘‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কংগ্রেস সরকারের আমলে কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধার ৯৫ শতাংশ আলোচনার মাধ্যমে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোদী সরকার যে পদ্ধতিতে ৩৭০ বিলোপ করেছে তা আইনত সঠিক নয়। আমরা বলেছি যা করবে, আইন মেনে করো। ভারতভুক্তির সময় একটি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীরের মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে কারফিউ জারি করে, কাশ্মীরের মানুষকে ঘরবন্দি করে, তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে এক ঝটকায় সেই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হল। এটা কি ঠিক?’’

যাক, অন্তত কারও কাছে একটা উত্তর মিলল। হাসিমুখে সভা থেকে বেরোলেন কর্মীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement