বিমল গুরুঙ্গকে ধরতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ প্রথম অভিযান চালায় সিকিমের নামচিতে। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় সেই অভিযানটি আইনসঙ্গত কিনা, তাই নিয়ে সব থেকে বেশি সরব হয়েছিলেন সিকিমের পুলিশকর্তা এ সুধাকর রাও। সেই এডিজি (স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ) হঠাৎ শিলিগুড়িতে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে শিলিগুড়িতে হাজির। যা দেখার পরে প্রশ্ন উঠেছে, সঙ্ঘের বৈঠকে কি কোনও কর্মরত পুলিশ আধিকারিক এ ভাবে আসতে পারেন?
রাজ্যের গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, দার্জিলিং থেকে গা ঢাকা দেওয়ার পরে বেশির ভাগ সময়ে বিমল গুরুঙ্গ সিকিমেরই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। সিকিমের নামচিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যে অভিযানে গিয়েছিল, তা-ও গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়েই। সিকিম পুলিশ প্রথমে দাবি করে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের আগে থেকে জানায়নি। সেই সময়ে দার্জিলিঙের এসপি-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু পরে পশ্চিমবঙ্গ এই সংক্রান্ত নথি প্রকাশ্যে আনার পরে তারা মেনে নেয়, তাদের জানিয়েই অভিযান হয়েছে।
সেই সময়ে সুধাকর রাও-ই সব থেকে বেশি সরব হয়েছিলেন এই অভিযানের বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে প্রশ্ন ওঠে, তিনি কি এই ভাবে গুরুঙ্গকেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জোগাচ্ছেন না?
এ হেন সুধাকরের এ দিনের শিলিগুড়ি সফর নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যখন তিনি এসেছিলেন, তখন সেখানে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ ভাইয়াজি যোশী থেকে শুরু করে ক্ষেত্রীয় প্রচারক প্রদীপ যোশী, সকলেই উপস্থিত। সুধাকরকে প্রদীপের সঙ্গে বেরিয়ে আসতেও দেখা গিয়েছে। তবে এডিজি সুধাকর রাও বলেছেন, ‘‘বৈঠকের ব্যাপার নেই। প্রদীপ যোশী আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আমি একটা কাজে শিলিগুড়িতে ছিলাম। ও এসেছে শুনে একটু মিষ্টি দিতে গিয়েছিলাম। নিজের গাড়ি নিয়েই গিয়েছিলাম। ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাব, তাতে লুকোছাপার কী আছে!’’
আরএসএসের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সিকিম পুলিশের এডিজি দেখা করলে সেখানে গুরুঙ্গ, পাহাড় সমস্যা নিয়ে কথা হবে না, তা কি হতে পারে? এডিজি-র দাবি, ‘‘প্রথমত, গুরুঙ্গ সিকিমে, কেউ এটা প্রমাণ দিতে পারবেন? দ্বিতীয়ত, আমি বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। মিষ্টিমুখ করিয়েছি। পুরানো দিনের টুকটাক গল্প করেছি। সেখানে এ সব প্রসঙ্গ তুলতে যাব কেন। সে জন্য অন্য ফোরাম রয়েছে।’’
সংগঠন সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ প্রথম এডিজি-কে দেখা যায় শিলিগুড়ির সেবক রোডে উত্তরবঙ্গ মারোয়াড়ি ভবনে। যেখানে ছিলেন ভাইয়াজি, প্রদীপ যোশীরা। তিনি মিনিট কুড়ি সেখানে কাটিয়ে ফিরে যান দাগাপুরের একটি বেসরকারি রিসর্টে। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ফের একটি গাড়ি নিয়ে ওই ভবনে যান।
সেখানে মিনিট ১৫ কাটানোর পরে বার হন তিনি। তাঁকে গাড়ি অবধি পৌঁছে দিতে আসেন পূর্ব ক্ষেত্রীয় (সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, আন্দামান) প্রচারক প্রদীপ যোশী। যিনি এডিজি-র বাল্যবন্ধু হিসেবে পরিচিত। যদিও প্রদীপ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’’