মন্দারমণির সৈকতে প্যারাসেলিং থেকে কালিম্পঙের তিস্তার র্যাফ্টিং, একের পর দুর্ঘটনা, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
গত তিন বছরে চার জন। রাজ্যে পাহাড় থেকে সমুদ্র সৈকত- ঝুঁকির পর্যটন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের টানে সকলেই প্রাণ হারিয়েছেন।
মন্দারমণির সৈকতে প্যারাসেলিং থেকে কালিম্পঙের তিস্তার র্যাফ্টিং, একের পর দুর্ঘটনা, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এ রাজ্যে সরকারি, প্রশাসনিক স্তরে নজরদারি, গাইডলাইনের এখনও কোনও ব্যবস্থা না থাকায় দিনের পর দিন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম বিপদজনক হয়ে উঠেছে বলেই পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা বা আইন তৈরি না হওয়ায় একদল যুবক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এক দফায় প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কাজ নেমে পড়ছেন। নথি দেখিয়ে প্রথম দফায় ছাড়পত্র নিচ্ছেন। আইন বা নজরদারি যথেষ্ট না থাকায় সমস্যা বাড়ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো বেড়েই যায়। দ্রুত সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম নিয়ে রাজ্যের উপযুক্ত নির্দেশিকা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারও এত দিনে গত জুনে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। ১৭০ পাতার নির্দেশিকায় জমির উপর ১৫টি, আকাশে ৭টি এবং জলে হয় এমন ৭টি অ্যা়ভেঞ্চার ট্যুরিজম আন্তর্জাতিক মান মেনে চালুর কথা বলা হয়েছে। রাজ্য স্তরে পর্যটন দফতর, সংস্থাগুলিকে এই নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে বলেও কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক বলেছে। পরিকাঠামো থেকে সরঞ্জামের পরিস্থিতি এবং গুণমান, গাইড-চালকদের প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নবীকরণ, নিয়মিত নজরারির কথা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশিকার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য স্তরের পর্যটন দফতর গাইডলাইন তৈরির কাজে নামে। কিন্তু তা এখনও তৈরি হয়নি। গত শনিবার কালিম্পঙে প্যারাগ্লাইডিং-এ গাইডের মৃত্যু এবং পর্যটকের গুরুতর জখম হওয়ার পর দ্রুত কার্যকরী করার দাবিও উঠেছে।
কোথায় মৃত্যু
• জুন ২০১৫: মন্দারমণিতে প্যারাসেলিং, লাইটপোস্টের ধাক্কায় মৃত মুর্শিদাবাদের তুষার ঘোষ
• মে ২০১৮: কালিম্পঙের তিস্তায় সাইমাইলে র্যাফ্টিং, উল্টে মৃত্যু বিহারের রোশন সিংহের
• অক্টোবর ২০১৮: কালিম্পঙের মেল্লিতে, র্যাফ্ট থেকে পড়ে মৃত মহারাষ্ট্রের কল্পনা রাঠি
• নভেম্বর ২০১৮: ডেলোতে প্যারাগ্লাইডিং, হাওয়ায় আছড়ে পড়ে মৃত নেপালের গাইড পুরষোত্তম সানি। জখম বিহারের পর্যটক
পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘কালিম্পঙের ঘটনার পর আর বসে থাকার সময় নেই। আমি দফতরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি। রাজ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম নিয়ে গাইডলাইনের কাজ শেষের মুখে। সংশোধন এবং সংযোজন পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত যাতে তা কার্যকরী হয়, তা দেখব।’’ পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত ছয় বছরে পাহাড়ের ডেলো, মেল্লিতে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের কাউন্টার ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। একজন প্রশিক্ষকদের লাইসেন্স দিয়ে সংস্থা খুলে পর্যটকদের জীবন নিয়ে খেলা চলছে। জিটিএ ছয় বছর আগে নথিপত্র দেখে সংস্থাগুলিকে অনুমতি দিলেও তার পরে না হয়েছে লাইসেন্স নবীকরণ, না চলেছে নজরদারি। যদিও শনিবার জিটিএ-র তরফে অনীক থাপা, বিনয় তামাং-রা গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তেমনিই, দিঘা বা মন্দারমণি জুড়ে গজিয়ে উঠেছে প্যারাসেলিং সেন্টার। সেখানেও লাইসেন্স নবীকরণ না করানো, নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকজন পর্যটন ব্যবসায়ী জানান, জম্মু কাশ্মীর, গোয়া, হিমাচলপ্রদেশ, পুণে, মুসৌরি’র মতো অঞ্চলে অনুমোদিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও রাজ্যগুলিতে সরকারি গাইডলাইন, আইন রয়েছে। তাই ভিন্ রাজ্যের পর্যটকেরা ধরেই নেন, এই রাজ্যেও সে ভাবেই সব চলে। কিন্তু দুর্ঘটনার পরে সত্যিটা সামনে আসে। এরই মধ্যে গজলডোবায় বোটিং, র্যাফ্টিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম চালুর প্রস্তুতি চলছে। সব নিয়ম মেনেই তা হবে বলে আশা।