গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি, কয়েক জন পড়ুয়ার ‘আক্রান্ত’ হওয়ার ঘটনায় আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। সোমবার থেকে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আবার সোমবার থেকেই রাজ্যে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের যাতে রাস্তাঘাটে কোনও রকম সমস্যায় পড়তে না হয়, তা নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, ‘‘কাল কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও রকম সমস্যায় পড়তে না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। যদি পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েন, তা হলে অ্যাকশন নেওয়া হবে।’’ সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার সিপির সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিমও। তিনিও একই কথাই বলেন।
শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দেন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফের সদস্যেরা। তা থেকেই অশান্তির সূত্রপাত। দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে। অভিযোগ, ব্রাত্যের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির পাশাপাশি তাঁর পাইলট কারে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ ওঠে। ব্রাত্য আহতও হন। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের পাল্টা অভিযোগ, মন্ত্রীর গাড়ি এক ছাত্রকে চাপা দিয়েছে। তিনি আহত হয়েছেন। ওই ছাত্র যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, তাঁর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সহপাঠীদের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পড়ুয়া অভিনব বসু নামে এক ছাত্রের পায়ের উপর দিয়ে তৃণমূল সমর্থিত অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে সিপি জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রাস্তাঘাটে যাতে কোনও সমস্যার মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা রাখা হবে। পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের উদ্দেশে সিপি বলেন, ‘‘সমস্যায় পড়লেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। পুলিশ তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেবে। রাস্তাঘাটে প্রচুর পুলিশ থাকবে। রাস্তাঘাট যাতে সচল থাকে, আমরা সেই ব্যবস্থাই করব।’’ কলকাতা পুলিশের তরফে একটি হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। নম্বরটি হল— ৯৪৩২৬১০০৩৯। পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়লে এই নম্বরে ফোন করলেই সাহায্য পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন সিপি।
রাজ্য পুলিশের তরফে জাভেদও একই কথা জানিয়েছেন। তিনিও জানান, পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষার হলে পৌঁছোতে পারেন, আবার পরীক্ষা শেষের পর বাড়ি ফিরতে পারেন, তার জন্য রাজ্য পুলিশের তরফে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থা, এমনকি রেলের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে পুলিশের তরফে, যাতে পরীক্ষার্থীরা রাস্তাঘাটে বিপদে না-পড়েন।
শনিবার বিকেলে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির পর রাতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে হঠাৎ আগুন লাগে। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার সিপি মনোজ। তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনায় মোট সাতটি এফআইআর রুজু হয়েছে। তার মধ্যে দু’টি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পুলিশ করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে ১২ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।’’
যাদবপুরে শিক্ষামন্ত্রী আক্রান্ত হওয়ার পরে আসরে নামে তৃণমূলও। শনিবার সন্ধ্যায় সুকান্ত সেতু থেকে মিছিল করে তারা। ঘটনার পরেই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, দলের সাংসদ সায়নী ঘোষ। তৃণমূল চড়া সুরে জবাব দেওয়ার ডাক উঠে দিয়েছে। কুণাল ঘোষ বলেন, “যাদবপুরে যা হয়েছে তা বাঁদরামি। শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল সমর্থক অধ্যাপকেরা সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। তৃণমূলের সৌজন্য মানে দুর্বলতা নয়। সীমা পার করলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া উচিত।” অরূপ বিশ্বাস বলেন, “আমরা চাইলেই যাদবপুর দখল করতে পারি! কিন্তু গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংযম দেখাচ্ছি।”