ছবি: সংগৃহীত।
অ্যাসিড-হামলার ঘটনা উত্তরাখণ্ডে যৎসামান্য। আক্রান্তের সংখ্যাও পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক কম। তা সত্ত্বেও উত্তরাখণ্ড সরকার অ্যাসিড-আক্রান্তদের মাসিক পেনশনের ব্যবস্থা করেছে। অথচ দেশে অ্যাসিড-হামলার ঘটনার নিরিখে শীর্ষে থেকেও এমন কোনও প্রকল্পের পরিকল্পনাই করে উঠতে পারল না পশ্চিমবঙ্গ সরকার!
অভিযোগ, পেনশন তো দূরের কথা, বাংলায় অ্যাসিড-আক্রান্তেরা তাঁদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা আদালত থেকে নির্দেশ বার করে আনছেন। যাঁদের সেই উপায় নেই, তাঁরা আধমরা হয়ে বেঁচে আছেন।
অ্যাসিড-আক্রান্ত তরুণীকে নিয়ে তৈরি দীপিকা পাড়ুকনের ছবি ‘ছপাক’ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। তার পরেই উত্তরাখণ্ডের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী রেখা আর্য ঘোষণা করেছেন, তাঁদের রাজ্যে যে-সব (১১-১২ জন) অ্যাসিড-আক্রান্ত রয়েছেন, সরকার তাঁদের মাসিক পেনশন দেবে। ৫-৬ হাজার টাকা করে সেই পেনশন পৌঁছে যাবে আক্রান্তদের হাতে। তাতে তাঁদের পরিবারগুলি উপকৃত হবে বলে মনে করছে উত্তরাখণ্ড সরকার। এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে এ রাজ্যের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও।
আরও পড়ুন: বাড়ছে সরকারি সম্পদ নষ্টের হার
ওই সংস্থাগুলি জানিয়েছে, বাংলায় এমন অনেক অ্যাসিড-আক্রান্ত রয়েছেন, যাঁদের উপার্জনে সংসার চলত। কিন্তু অ্যাসিড-হামলার পরে কারও দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কার শরীর গিয়েছে ঝলসে। ফলে তাঁদের অনেকে আর কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না। দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন অনেকে। তাঁদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। সেখানে মাসে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা পাওয়া মানে তাঁদের কাছে অনেক। দরিদ্রসীমার নীচের অনেক পরিবারের মেয়ে গৃহশিক্ষকতা করে নিজের পড়াশোনা চালাতেন। কিন্তু অ্যাসিড-হামলায় চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পড়ানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অ্যাসিড-আক্রান্তদের কল্যাণে কর্মরত বাংলার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির বক্তব্য, উত্তরাখণ্ডের মতো পেনশন দিলে পরিবারগুলি অন্তত খেতে পেত। অনেক তরুণী ফের পড়াশোনা শুরু করতে পারতেন।
পশ্চিমবঙ্গের নারী ও সমাজকল্যাণ দফতর এই বিষয়ে কিছু ভাবছে কী? বক্তব্য জানতে চেয়ে ওই দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজাকে ফোন এবং মেসেজ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। তবে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পেনশন নিয়ে কোনও প্রস্তাব না-পাঠালেও তাঁরা কয়েক মাস আগে ওই দফতরকে চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে অ্যাসিড-হামলা কমানোর পথ সন্ধান এবং আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে নতুন কিছু প্রস্তাব আছে। সেগুলো কার্যকর হলেও অ্যাসিড-আক্রান্তেরা উপকৃত হবেন।