অয়ন শীল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে এ বার একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের সন্ধান পেল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই গ্রুপের মাধ্যমেই চলত দুর্নীতির কারবার। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নাম এই গ্রুপে জমা পড়ার পর, তাঁদের চাকরি সুনিশ্চিত করতেন পুর কর্তৃপক্ষ।
তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যা জানা গিয়েছে, তা হল, এই গ্রুপটির ‘অ্যাডমিন’ ছিলেন নিয়োগ মামলায় ইতিমধ্যেই ধৃত অয়ন শীল। তবে অয়নই এই গ্রুপ খুলেছিলেন, না কি নেপথ্যে অন্য কোনও ‘বড় মাথা’ ছিলেন, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে খবর, এই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে ছিলেন রাজ্যের একাধিক পুরসভার কর্তারাও। অয়নের ফোন খতিয়ে দেখেই এই গ্রুপের সন্ধান মেলে বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি।
তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন পুরসভার পাশাপাশি এই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপেও সমান্তরাল ভাবে পুর প্রশাসনকে পরিচালিত করা হত। নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হত এই গ্রুপেও। তবে একটিই গ্রুপ ছিল, না কি একাধিক গ্রুপ ছিল, ঠিক কারা কারা গ্রুপের ‘মেম্বার’ ছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে ইডি।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূত্র ধরে প্রোমোটার অয়ন শীলের নাম প্রকাশ্যে আসে। ঘটনার সূত্রপাত গত মার্চ মাসের ১৯ তারিখ। সল্টলেকে অয়নের অফিস এবং হুগলিতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। সেই সময় দিস্তা দিস্তা উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)-এর পাশাপাশি ২৮ পাতার একটি নথি পান তদন্তকারীরা। আপাতদৃষ্টিতে তা প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি মনে করা হলেও পরে দেখা যায় ওই নথির মধ্যে রয়েছে একাধিক পুরসভার প্রার্থী তালিকা এবং সেই সংক্রান্ত সুপারিশ। বাজেয়াপ্ত সেই নথির মধ্যে প্রার্থী তালিকায় থাকা নামের পাশে বেশ কিছু ‘কোড ওয়ার্ড’ও পান তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
ইডি সূত্রের খবর, তাদের জেরায় অয়ন জানিয়েছেন, পুর নিয়োগে দুর্নীতি ২০১৪-’১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে কমবেশি ৬০টি পুরসভায় কর্মী নিয়োগের কাজের বরাত অয়নের সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজ়োন’ পেয়েছিল বলে ইডি আধিকারিকদের জানিয়েছেন অয়ন। সেই সময় এক একটি পুরসভায় প্রায় ১০০ জন করে নিয়োগ করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, সেই হিসাবে ৬,০০০ নিয়োগ হয়েছিল অয়নের সংস্থার মাধ্যমে। তার মধ্যে প্রায় ৫,০০০ নিয়োগের ফলাফল ‘বিকৃত’ করা হয়েছিল বলেও মনে করছেন ইডি কর্তারা। এর মধ্যে মন্ত্রীর মাধ্যমে কত সুপারিশ করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে ওই সময়কালে মন্ত্রী, বিধায়করা কে কোন পদে ছিলেন, সে সম্পর্কেও তথ্য জোগাড় করা হয়েছে।