আদালতে হাজিরা। —নিজস্ব চিত্র
অবশেষে তিনি এলেন। এবং জানালেন, তিনি ‘নির্দোষ’।
পাড়ুইয়ে উস্কানি মামলায় শুক্রবার সিউড়ির সিজেএম নিরুপম করের এজলাসে উপস্থিত হয়ে এমনটাই দাবি করলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট।
সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন জানান, ক’ দিন আগেই ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আদালতে জমা পড়েছে অভিযুক্তের বক্তব্যের ভিডিও-র ফরেন্সিক রিপোর্টও। এ দিন অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের দিন ধার্য ছিল। তা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত শুনানি হবে। এর পরেই রায় দেবেন বিচারক।
২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক মুখে পাড়ুইয়ের কসবায় সভায় পুলিশকে বোমা মারার এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন অনুব্রত। ওই বক্তৃতার পরেই একাধিক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাঁধনবগ্রামে খুন হয়ে যান এক নির্দল প্রার্থীর বাবাও। উস্কানিমূলক বক্তৃতার প্রেক্ষিতে অনুব্রতর বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা করলেও সিউড়ি আদালত জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেয়। তার পরেও পুলিশ অনুব্রতের বিরুদ্ধে সব ক’টি জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনে। গুরুতর অভিযোগ থাকলেও পুলিশ কতকগুলি জামিনযোগ্য ধারা প্রয়োগ করায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে আইনজীবীদের একাংশের মত।
বিচার প্রক্রিয়া চালাকালীন যে পাঁচ পুলিশকর্মী সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁরাও অনুব্রতর বিরুদ্ধে এমন কিছু বলেননি যাতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক কাজ করার বিষয় সামনে এসেছে। ঘটনা হল, বিতর্কিত বক্তব্যের যে সিডি বা ডিভিডি ফরেন্সিক টেস্টের জন্য চণ্ডীগড় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল (গত ৩০ নভেম্বর যা আদালতে জমা পড়েছে) তার সঙ্গে অভিযুক্তের আসল কণ্ঠস্বরের নমুনাই পাঠায়নি পুলিশ। অতএব অনু্ব্রতর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কোনও জায়গা নেই বলেই আইনজীবীদের একাংশের মত। তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি রণজিৎবাবু।
গত ৩০ নভেম্বরের শুনানিতে হাজিরার দিন ধার্য হলেও প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে আদালতে হাজির হননি অনুব্রত। কিন্তু, এ দিন যে তৃণমূলের ওই দাপুটে নেতা আদালতে আসবেন, সকাল থেকেই তার আভাস মিলছিল। আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন একাধিক তৃণমূল নেতা। ছিলেন একাধিক আইনজীবীও। বেলা ১২টা নাগাদ সপার্ষদ আদালতে আসেন অনুব্রত। সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি পায়ে চোট পেয়েছেন।
বেলা ১২টা ১০ নাগাদ কাঠগড়ায় উঠলে কে কে তাঁর বিরুদ্ধে কী কী সাক্ষ্য দিয়েছেন, বিচারক তা অনুব্রতকে জানান। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের সিডি কোথায় পাঠানো হয়েছিল, কোন কোন ধারায় অভিযোগ রয়েছে, সে কথাও জানানো হয়। বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত কেবল একটি কথাই বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ।’’ আদালত থেকে বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরেও তিনি একই দাবি করেন।