সবংয়ের মঞ্চে মানস, দেখতে পেল না পুলিশ

অবশেষে তিনি এলেন। সভা করলেন। এবং একই সঙ্গে অদৃশ্যও থাকলেন। বলিউডের ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ নন। তিনি ‘মিস্টার সবং’, মানস ভুঁইয়া। সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে সশরীরে বক্তৃতা করার সময়েও তাঁকে দেখতে পেলেন না জেলা পুলিশের কোনও কর্তা। আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই তাই মানসবাবু সবং ঘুরলেন বেশ ঘটা করেই।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

সবং শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

নিজের খাসতালুকে মমতা-বন্দনায় মানস ভুঁইয়া। সোমবার সবংয়ে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

অবশেষে তিনি এলেন। সভা করলেন। এবং একই সঙ্গে অদৃশ্যও থাকলেন।

Advertisement

বলিউডের ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ নন। তিনি ‘মিস্টার সবং’, মানস ভুঁইয়া। সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে সশরীরে বক্তৃতা করার সময়েও তাঁকে দেখতে পেলেন না জেলা পুলিশের কোনও কর্তা। আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই তাই মানসবাবু সবং ঘুরলেন বেশ ঘটা করেই।

তবে শুধু পুলি‌শই নয়, সোমবার ‘দলবদলু’ মানসকে দেখেও কার্যত দেখলেন না সবংয়ের পোড় খাওয়া তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের মঞ্চে মানসবাবুকে সৌজন্য জানাতেও এলেন না মাত্র কয়েক হাত দূরে পঞ্চায়েত সমিতি ভবনে বসে থাকা জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি, ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতিরা। সভা শেষের কিছুটা আগে অবশ্য মঞ্চে একবার দেখা গেল জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষকে। তবে তা যেন নেহাতই চাঁদ সওদাগরের বাঁ হাতে মনসা-পুজো!

Advertisement

সবংয়ে মানসবাবু শেষ পা দিয়েছিলেন ভোটের দিন, গত ১১ এপ্রিল। এর পরেই তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানা খুনের মামলায় তাঁর নামে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। সবংয়ে এলেই গ্রেফতার হতে হবে এই ‘ভয়ে’ ভোটে জেতার পাঁচ মাসের মধ্যে আর সবংয়ের ছায়া মাড়াননি মানসবাবু।

সেই সবংয়ে মানসবাবু যখন এলেনই, তখন তাঁকে কেন দেখতে পাচ্ছে না পুলিশ, এ দিন এই প্রশ্ন তুলেছেন নিহত জয়দেবের স্ত্রী মানসী। তিনি বলেন, “আদালত ওঁকে গ্রেফতার করতে বলেছে। উনি সবং ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর পুলিশ ওঁকে দেখতে পাচ্ছে না!’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে বার বার চেষ্টা করেও এ দিন ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তের দাবি, ‘‘মানস ভুঁইয়া সবংয়ে এসেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে ওঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। সে ব্যাপারে নিয়মমাফিক পদক্ষেপ হবে।’’ তবে কি মানসবাবুকে গ্রেফতার করা হতে পারে? এ বার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের জবাব, ‘‘এর বেশি আর কিছু বলব না।’’

জার্সি বদলের পর এ দিন বিধায়ক হিসাবে পঞ্চায়েত সমিতির সাধারণ সভায় যোগ দেন মানসবাবু। তাঁর এই ‘আগমন’ সাড়ম্বরে পালন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কংগ্রেস ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে আসা কর্মীরা। তাঁরাই পঞ্চায়েত সমিতির গেটের বাইরে সভা আয়োজন করেন। আর ওই সভাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মানসবাবুকে নিয়ে কী ভাবছেন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রভাতবাবু তো বলেই বসেন, “আমার অনুমতি ছাড়াই এই সভা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে এ নিয়ে রিপোর্ট পাঠাব।”

এই আকচাআকচিতে মানসবাবুকে নিয়ে এ দিনের বাইক র‌্যালির সিদ্ধান্তও শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়। সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া আবু কালাম বক্স রবিবার দাবি করেছিলেন, মানসবাবুকে নিয়ে পিংলার জামনা থেকে সবং পঞ্চায়েত সমিতি পর্যন্ত র‌্যালি হবে। যদিও এ দিন তাঁর বক্তব্য, “বাইক র‌্যালির জন্য অনুমতি লাগে। তা পাওয়া যায়নি।’’

তবে এ সব গায়ে মাখছেন না সবংয়ের বিধায়ক। এ দিনও তিনি মমতা-বন্দনা করে গিয়েছেন। আর তা করতে গিয়ে ছাপিয়ে গিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকেও, এক সময় যাঁর সঙ্গে মানসবাবুর সম্পর্ক ছিল আদায়-কাঁচকলায়। পুলিশের অনুষ্ঠানে ভারতীদেবী বারবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে সম্বোধন করেছেন। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে মানসবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মা, বোন, নেত্রী। ১৯৯৭ সালে আমরা তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হতে বাধা দিয়ে পাপ করেছিলাম। সেই পাপ না করলে মার্কসবাদীরা অনেক আগেই এই বাংলা থেকে বিদায় নিত।”

শুধু মমতা নন, জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বন্দনাও শোনা গিয়েছে প্রবীণ এই নেতার মুখে। মানসবাবু জানিয়েছেন, জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, যুব সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির নেতৃত্বে তিনি এ বার কাজ করবেন।

চার দশক ধরে রাজনীতি করা মানুষটার মুখে যা শুনে থ মেরে গিয়েছেন মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূল নেতারাই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement