WB Panchayat Election 2023

মালদহে অভিষেকের নিশানায় ফের অধীর, কড়া হুঁশিয়ারি বিক্ষুব্ধ নির্দলদেরও

সুজাপুরে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রবিবার দলীয় প্রচারে গিয়ে পটনায় বিজেপি-বিরোধী বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসকে প্রথম থেকেই আক্রমণের পথে যান অভিষেক।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

সুজাপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩৭
Share:

(বাঁ দিকে) প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং (ডান দিকে) তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসের এক সময়ের শক্ত ঘাঁটি মালদহে দাঁড়িয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে বিজেপির ‘এজেন্ট’ আখ্যা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় কংগ্রেস বিজেপির ‘বি টিম’ হয়ে কাজ করছে বলেও তাঁর অভিযোগ। কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা দাবি করছে, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নজর ঘোরাতে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় কংগ্রেসকে বারবার বিজেপির দোসর বলে আখ্যা দিয়ে মানুষকে ‘বিভ্রান্ত’ করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

সুজাপুরে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রবিবার দলীয় প্রচারে গিয়ে পটনায় বিজেপি-বিরোধী বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসকে প্রথম থেকেই আক্রমণের পথে যান অভিষেক। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর, সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “পটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে রাহুল গান্ধী বিজেপিকে উৎখাতের ডাক দিচ্ছেন। বাংলায় তাঁর দলের নেতা, মুর্শিদাবাদের রবিনহুড অধীর চৌধুরী বিজেপির এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন! তিনি কখনও শুভেন্দু, সুকান্ত, দিলীপ ঘোষদের নামে কোনও কথা বলেন না। শুধুই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন।’’

পাশাপাশিই, বাংলায় কংগ্রেস বিজেপির ‘বি-টিম’ হয়েও কাজ করছে বলে দাবি করে তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যে কংগ্রেসের দুই সাংসদ রয়েছেন। তাঁরা কখনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলা আবাস, ১০০ দিনের বকেয়া পাওনা নিয়ে দরবার করেন না। আবু হাসেম খান চৌধুরীরা উন্নয়ন নিয়ে কোনও বৈঠক করেন না। কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করেন না।”

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘একটা শায়রি আছে, ‘ইধর উধর কি বাত না কর, ইয়ে বাতা কি কাফিলা কিঁউ লুটা’। ওঁর কথার উত্তরে সেই কথাটাই বলতে হয়। এই সব কাসুন্দি না ঘেঁটে লুট, দুর্নীতিতে পঞ্চায়েতের কী হাল হয়েছে, সেটা বলুন! বাংলায় যারা বিজেপির সঙ্গে জোট করেছিল, এনডিএ সরকারে যারা মন্ত্রী ছিল, যাদের আমলে রাজ্যে আরএসএসের শাখা বেড়েছে, তারা এসে কংগ্রেসের লোককে ‘বিজেপির এজেন্ট’ বলবে! মেরুকরণের রাজনীতিতে আমাদের শক্তি কমে যাওয়ায় তৃণমূল এবং বিজেপির লাভ হয়েছে, এ সব তো জলের মতো পরিষ্কার!’’

এর আগে জনসংযোগ এবং ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি চলাকালীনও অভিষেক একাধিক বার অধীর ও কংগ্রেসকে বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগে তোপ দেগেছেন। অধীরের পাল্টা দাবি, সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থন তৃণমূলের দিক থেকে যত সরছে, শাসক দল তত বেশি করে কংগ্রেস-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলে তাঁদের ‘বিভ্রান্ত’ করতে চাইছে। পাশাপাশিই, অভিষেকের আক্রমণের জবাবে জেলার উন্নয়নে কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয় না বলে পাল্টা সরব হয়েছেন ডালুবাবুর ছেলে ইশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করলেও সাংসদকে ডাকা হয় না। তার পরেও জেলার উন্নয়নে কংগ্রেস কাজ করছে কি না, মালদহের মানুষ তা ভাল করেই জানেন।”

কংগ্রেসকে আক্রমণ করার পাশাপাশি এ দিন নিজের দলের বিক্ষুব্ধ নির্দলদেরও ফের হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক। তিনি বলেন, “নবজোয়ার যাত্রার মাধ্যমে পঞ্চায়েতের প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। যাঁরা নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জীবনেও দলে ফেরানো হবে না! তার পরেও কেউ দলে নিলে আমি জেলায় এসে তাঁদের সরিয়ে দেব।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তিন মাস অন্তর পঞ্চায়েত প্রধানদের মূল্যায়ন, পর্যালোচনা হবে। যাঁরা ভাল কাজ করবেন, তাঁদের মেয়াদ বাড়ানো হবে। যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করবেন না, তাঁদের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এমনকি, প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ভাইপো ভাষণ দিচ্ছেন, প্রতিটি পঞ্চায়েতের তিন মাস অন্তর নিজে মূল্যায়ন করবেন। মূল্যায়ন করা তো মানুষের কাজ। লুটের বখরার হিসেব-মূল্যায়ন ছাড়া অন্য কিছু পারবেন কি ভাইপো?’’

বাংলার ‘পাওনা’ নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনে নামার বার্তাও ফের শোনা গিয়েছে অভিষেকের মুখে। কলকাতায় ২১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের বিজয় উৎসব পালন হবে বলেও এ দিনের সভা থেকে ঘোষণা করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement