বক্তা: দার্জিলিংয়ের চকবাজারে পুর নির্বাচনের প্রচারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
সকাল এগারোটায় চকবাজারে যখন তৃণমূলের সভা শুরু হল, দার্জিলিঙে তখন ঝকঝকে রোদ। প্রধান বক্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন আধ ঘণ্টা পরে। তত ক্ষণে সামনের দু’হাজার চেয়ার তো ভর্তি হয়েই গিয়েছে। তা ছাপিয়ে চারদিকের গলিতে ঢুকে পড়েছে ভিড়। দু’পাশের দোকানগুলোর ছাদ, ব্যালকনিও তখন উপচে পড়ছে। এলাকার রাস্তা দিয়ে চলার কোনও জো নেই।
চকবাজারের এই সভায় তৃণমূল দেখিয়ে দিল, এখন পাহাড়ে তারাও ভিড় জমাতে পারে। ‘‘মোর্চার সভাতেও এমনই ভিড় হয়,’’ বলছিলেন এলাকার এক দোকানি। তার পরে আঙুল তুলে উপরের দিকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘ব্যানার-ফেস্টুন দেখেছেন! এখানে মোর্চা কোথায় আছে, বোঝাই যাচ্ছে না।’’
এই ছবিটা রোহিনী দিয়ে উঠতে সর্বত্র চোখে পড়েছে এ দিন। দার্জিলিং পর্যন্ত পাহাড়ি পথের অধিকাংশ জুড়ে শুধু ঘাসফুলের পতাকা-ব্যানার। সভায় কত লোক হয়েছিল? পুলিশের হিসেবে হাজার চারেক। স্থানীয় লোকের বক্তব্য, তৃণমূলের জনসভায় এত লোক আগে কবে পাহাড়ে দেখা গিয়েছে, মনে পড়ছে না।
গত জানুয়ারি মাসে ম্যাল চৌরাস্তায় সভা করে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের নেতারা এসে ঘাঁটি গেড়ে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু জনসভা এই প্রথম, পুরভোটের প্রাক্কালে। সেখানে দাঁড়িয়ে অভিষেক মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে নতুন দার্জিলিং গড়ার ডাক দিয়েছেন। এবং বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরিদের কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘ওঁদের যতবার পাহাড়ের রাস্তায় দেখা যায়নি, তার চেয়ে বেশিবার মুখ্যমন্ত্রীকে এখানে দেখা গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন:পর্যটনের জাতীয় অনুষ্ঠান বাংলায়, গরহাজির রাজ্যই
এ দিন শুধু দার্জিলিং নয়, আশপাশের এলাকা থেকেও লোক এনেছে তৃণমূল। তারা উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন, যা এত দিন পাহাড়ে বিশেষ শোনা যেত না। যেমন, সুখিয়াপোখরির নিমা তামাঙ্গ বলেন, ‘‘দিদি উন্নয়নের কথা বলছেন। বারবার ছুটে আসছেন। নানা প্রকল্পও হচ্ছে শুনছি। সেই টানেই সভায় এসেছি।’’ ঘুমের বিকাশ লামা, দামোদর খাওয়াসের বক্তব্য, ‘‘কোনও কিছুই স্থায়ী ভাল নয়, পরিবর্তন প্রয়োজন। এতে উন্নয়ন তরান্বিত হবে।’’ সোনাদার অঞ্জু থাপাদেরও বক্তব্য, ‘‘আমরা পাহাড়ে বন্ধ চাই না। কাজ করে খেতে চাই।’’
অভিষেকও এ দিন বলেন, ‘‘পাহাড়ে বন্ধের রাজনীতিতে আখেরে সাধারণ মানুষের ক্ষতি। তৃণমূল বন্ধ-রাজনীতি করে না।’’
যা দেখেশুনে মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলছেন, ‘‘রাজ্য তো পাহাড়ে বিভেদের রাজনীতি করে। অভিষেকবাবুরা বাকি রাজ্যকে কাশ্মীর করুন, পাহাড়ের কথা পরে ভাববেন।’’ ভিড় নিয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।