তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অন্তত ১৫ জন বিদেশিনির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক ‘প্রভাবশালী’র দুর্নীতির টাকা পাচার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি সূত্রে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া ‘মনগড়া গল্প’ ছড়ানো হচ্ছে, এই অভিযোগে বিদেশে বসেই ইডি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অপপ্রচারে’ শামিল হওয়ায় সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও নিশানা করেছেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘প্রভাবশালী’ সম্পর্কে কিছু বলা হলেই অভিষেক সে সব নিজের গায়ে মেখে নিচ্ছেন কেন? তাদের কটাক্ষ, এ তো ‘ঠাকুরঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি’র লক্ষণ!
চোখের চিকিৎসা করাতে অভিষেক এখন আমেরিকায়। নিউ ইয়র্ক থেকেই সোমবার সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘ইডি-র অযোগ্যেরা হতাশ করছেন! রাজনৈতিক অনুগ্রহকারীদের সন্তুষ্ট করতে নিয়ম করে মনগড়া গল্প ছড়াতে তাঁদের প্রতিভার তুলনা নই। কিন্তু তদন্তের নামে বছরের পর বছর করদাতাদের অর্থ ধ্বংস করেও তাঁরা উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেন না। এটা দুঃখের’।’ ইডি আধিকারিকদের কাঠগড়ায় তুলে তাঁর দাবি, ‘তাঁরা নিজেদের দায়িত্বের প্রতিও অবহেলা করছেন। মামলার নিষ্পত্তি ও দোষী সাব্যস্ত করার সংখ্যায় তা-ই প্রমাণিত। ইডি-র দোষী সাব্যস্ত করার হার মাত্র ০.৫%’। এর পরেই বিজেপি ও সংবাদমাধ্যমের প্রসঙ্গ এনে অভিষেকের মন্তব্য, ‘এই নিয়ে আমরা আর অবাক হই না। রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মতো ইডি এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছে। বেচারাদের জন্য করুণা হয়’!
অভিষেকের এই বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ‘শেয়ার’ করেছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী এবং শাখা সংগঠনের নেতৃত্ব। শাসক শিবির সূত্রের ইঙ্গিত, অভিষেক দেশে ফেরার পরে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পথেও যাওয়া হতে পারে। অভিষেকের নাম করে কিছু বলা হলে তিনি মানহানির মামলা করতে পারতেন। কিন্তু নাম না থাকায় তা করা যাচ্ছে না এবং সেই সূত্রে উষ্মা প্রকাশ করছেন অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিদেশিনিদের অ্যাকাউন্টে ‘প্রভাবশালী’র টাকা রাখার অভিযোগ এবং তার পরে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের তোপকে হাতিয়ার করে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রভাবশালীর টাকা পাচারের কথা উঠতেই খেপে গেলেন ভাইপো! একে বলে ঠাকুরঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি!’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘তবে একটা কথা উনি ঠিকই বলেছেন, ইডি-র লোকজন অযোগ্য! ইডি-র রক্ষাকবচ নিয়েই বিদেশে গিয়ে ভাইপো আবার ইডি-কেই গাল দিচ্ছেন! এত কিছুর পরেও ইডি কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেন? ভাইপোর এমন আক্রমণের পরে ইডি কি মেরুদণ্ড সোজা করে কাজের কাজ করবে?’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘১৯৪২ সালের ৩১ অগস্ট জার্মানি থেকে ভবানীপুর নিবাসী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করেছিলেন। আরও এক ভবানীপুর নিবাসী সেই অগস্ট মাসেই সেই দেশের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তকারী সর্বোচ্চ সংস্থার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মন্তব্য করলেন। মানুষ সব দেখছেন। ভাবমূর্তি ফেরানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা। দ্রুত আদালতের রায়ে সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তো ‘স্বাস্থ্যসাথী’ চালু করেছে। তা হলে ভাইপো চোখের চিকিৎসার জন্য এক বার সিঙ্গাপুর, এক বার আমেরিকায় যান কেন? পুরো ব্যাপারটাই রহস্যজনক! আমরা এ সব কথা বারবার বলেছি। আর এখন প্রভাবশালীর কথা শুনেই উনি যা বলছেন, তাতে ‘ঠাকুরঘরে কে’ প্রবাদটাই মনে পড়ে!’’