অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
সংগঠনের সর্বস্তরে ‘ঝাঁকুনি’ দিতে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে শাসকদলের অন্দরে সবচেয়ে বড় কৌতূহল— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি ওই সভায় থাকবেন? আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে তৃণমূলের কেউ কিছু বলছেন না। অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘খুব সম্ভবত’ তিনি থাকবেন। তাঁদের বয়ানে, ‘‘মোস্ট লাইকলি।’’ কয়েক জন এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘দলের বৈঠক তো। নিশ্চয়ই থাকবেন। তবে এখনও পর্যন্ত খুব সম্ভবত থাকবেনই বলছি।’’
অভিষেক থাকুন বা না-থাকুন, বৃহস্পতিবারের মহাবৈঠকে তাঁকে নিয়ে কৌতূহল থাকবে শাসক শিবিরের অন্দরে সাম্প্রতিক সমীকরণের নিরিখে। না থাকলে যেমন সমীকরণ সংক্রান্ত জল্পনা আরও জোরালো হবে, তেমনই থাকলে তিনি কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহী থাকবে গোটা দল।
গত কয়েক মাস ধরে দলের সাংগঠনিক কাজ থেকে অভিষেক ‘দূরত্ব’ রচনা করেছেন। দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে তাঁকে খুব একটা প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। আপাতত তিনি ব্যস্ত তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্প নিয়ে। তবে অতীত উদাহরণ বলছে, দলের এই ধরনের কোনও কর্মসূচি অভিষেক সাধারণত এড়িয়ে যান না। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এমনই একটি সভা হয়েছিল নেতাজি ইন্ডোরে। সেই সময়ে চোখের সমস্যার কারণে অভিষেক সশরীরে সভায় না গেলেও ‘ভার্চুয়াল’ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তবে লোকসভা নির্বাচনের অব্যবহিত পরেই অভিষেক সংগঠন থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। সেই পর্বে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ২১ জুলাইয়ের বার্ষিক সভায় অভিষেকের উপস্থিতি নিয়ে। কিন্তু সমাবেশের ঠিক আগের দিনই কলকাতায় ফিরে অভিষেক সভায় যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, আরজি করের ঘটনা নিয়ে আন্দোলন পর্বে কয়েকটি ‘এক্স’ পোস্ট ছাড়া অভিষেক নীরবই ছিলেন। তখনও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ‘নীরবতা’ নিয়ে দলে নানাবিধ জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তখনও এই কৌতূহল তৈরি হয়েছিল এই মর্মে যে, অভিষেক ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে থাকবেন কি না। কিন্তু অভিষেক সেখানে ছিলেন। বক্তৃতাও করেছিলেন। এই সব উদাহরণ দিয়েই অভিষেক-ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, ‘খুব সম্ভবত’ অভিষেক বৃহস্পতিবারের সভায় যাবেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে নেতাজি ইন্ডোরে মমতা যে সভা করেছিলেন, সেখানে মঞ্চের প্রেক্ষাপটে নেত্রীর সঙ্গে কেন অভিষেকের ছবি নেই, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। কুণাল ঘোষের মতো নেতারা প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন অভিষেকের ছবিও রাখা হল না? যদিও তখন দলের অন্দরে কুণালের যে ‘অবস্থান’ ছিল, ইদানীং তা নেই বলেই দলের অনেকের অভিমত। গত কয়েক মাসে তৃণমূলের ‘ভরকেন্দ্র’ বদলে যাওয়ার একাধিক উদাহরণও রয়েছে। মমতা একাধিক বার বার্তা দিয়েছেন, সরকার তো বটেই, সংগঠনেও তিনিই শেষ কথা। দলীয় বৈঠকেও মমতার বক্তব্য ছিল, তিনি আরও ১০ বছর দল চালাবেন। সেই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারের সভামঞ্চে মমতার সঙ্গে অভিষেকের ছবি থাকে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে বিধানসভার লক্ষ্যে দলের সুর বেঁধে দেবেন মমতা। ভোটার তালিকা সংশোধন, সংযোজনের প্রক্রিয়ায় কী ভাবে কাজ করতে হবে, সেই সংক্রান্ত বার্তাও নেত্রী দিতে পারেন বলে ধারণা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের। তবে এ সবের বাইরেও অন্যতম কৌতূহল অভিষেকের থাকা, না-থাকা নিয়ে। যেমন কৌতূহল তাঁর ছবি নিয়েও।