অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র ।
চোখের চিকিৎসার কারণে আমেরিকার জন্স হপকিন্স হাসপাতালে এখন ভর্তি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁ চোখের সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি তাঁর সেই চোখে আরও একবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আপাতত তিনি জন্স হপকিন্স হাসপাতালে চিকিৎসক এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন অভিষেক। শনিবার টুইট করে এই তথ্য জানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
টুইটারে অভিষেকের বাঁ চোখের একটি ছবি দিয়ে কুণাল লিখেছেন, ‘‘যাঁরা অভিষেকের চোখের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার নিয়ে অমানবিক ভাবে সমালোচনা করছিলেন, তাঁদের ওঁর চোখের অবস্থা দেখা উচিত। অভিষেকের এই চোখটি দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সম্প্রতি তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে এবং তিনি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আমরা সবাই তাঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।’’
টুইটারে কুণাল অভিষেকের যে ছবিটি পোস্ট করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের বাঁ চোখের মণি ছাড়া বাকি অংশ টকটকে লাল। চোখের নীচের দিকে অস্ত্রোপচারের দাগ স্পষ্ট। অস্ত্রোপচারের কারণে বাঁ চোখের একাংশ বেশ খানিকটা ফোলাও রয়েছে বলে ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মুর্শিদাবাদে এক দলীয় কর্মিসভা থেকে ফেরার পথে এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন অভিষেক। সিঙ্গুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দুধের গাড়িতে আচমকাই ধাক্কা মেরে উল্টে যায় অভিষেকের গাড়ি। দুমড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে অভিষেককে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেই দুর্ঘটনাতেই সাংসদের বাঁ চোখের নীচের হাড়টি ভেঙে যায়। এর পর থেকে তিনি দীর্ঘ দিন ওই চোখ নিয়ে সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার কারণে তাঁকে একাধিক বার দুবাইও যেতে হয়েছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, এর আগেও একাধিক বার অভিষেকের ওই চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসা হয়েছে সিঙ্গাপুর এবং হায়দরাবাদেও।
কিছু দিন আগে অভিষেক আমেরিকার ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। এই সপ্তাহেই তাঁর চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। যা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নে ঘরোয়া আলাপচারিতায় তিনি ওই বিষয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, অভিষেক অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে উঠছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় ফিরবেন।
ঘটনাচক্রে, অভিষেকের চোখের চিকিৎসা নিয়ে বার বার কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছে বিরোধী বিজেপি শিবিরকে। অভিষেক আদৌ চিকিৎসার কারণেই দুবাই যেতেন কি না, তা নিয়েও গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে একাধিক বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কুণালের টুইটে বলা হয়েছে, বিজেপি নেতাদের অভিষেকের চোখের চিকিৎসা সম্পর্কে সন্দেহ ‘অমানবিক’। বস্তুত, কয়লাপাচার-কাণ্ডে অভিষেককে ইডির তরফে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়েও তাঁকে চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাধা দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অভিষেক বার বারই চোখের চিকিৎসার কারণে বিদেশযাত্রার কথা বললেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।
তখন থেকেই বিরোধী শিবিরের একাংশ বলছিলেন, ইডির হাজিরা এড়াতেই বিদেশযাত্রার ‘তত্ত্ব’ খাড়া করা হচ্ছে। এ নিয়ে অভিষেক অবশ্য নীরবই থেকেছেন। তাতে জল্পনা আরও জোরালো হয়েছিল। যদিও তাঁর আইনজীবী শীর্ষ আদালতে যা জানানোর জানিয়েছিলেন।
সেই সব ঘটনাপ্রবাহের জেরেই অভিষেকের অস্ত্রোপচার-পর্বর্তী ছবি দিয়ে কুণালের শনিবার সকালের টুইট বলে মনে করছেন শাসক শিবিরের একাংশ। বিরোধী বিজেপি বা সিপিএম ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করে কি না বা করলেও কী মন্তব্য করে, এখন সেটাই দেখার।