অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় রাজ্য সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে ‘ব্যর্থ’ বলে মনে করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে খবর, সরকারের একের পর এক ‘ভুল’ পদক্ষেপ নিয়ে দলের অন্দরে চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনে করছেন, প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে ‘বদল’ ছাড়া দল ও সরকারের পক্ষে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।
আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘিরে তৃণমূলের অন্দরেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় গত সাত দিন প্রশাসন যে ভাবে এগিয়েছে, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। জানা গিয়েছে, মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাজে চূড়ান্ত গাফিলতি চিহ্নিত করে আপাতত এ সব থেকে দূরে থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। দলে অভিষেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক নেতার কথায়, ‘‘সাধারণ সম্পাদক মনে করছেন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সাধারণ প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাবেই একের পর এক ভুল পদক্ষেপ হয়েছে। তাতে সরকার ও দল সম্পর্কে জনমানসে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।’’ মধ্য রাতে হাসপাতালে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের সময় পুলিশের ভূমিকায় নিয়েও দলের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিষেক।
দলীয় সূত্রে খবর, হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের ‘ল্যাজেগোবরে’ অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও উষ্মা জানান অভিষেক। ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথাও স্পষ্ট করেছেন তিনি। রাজ্য জুড়ে সরকার-বিরোধী প্রতিবাদ-আন্দোলনের মধ্যে শনিবার দলের অন্দরে শুরু এই আলোড়নের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয় তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের মন্তব্যে। এই আন্দোলনকে ‘বাম-রাম চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেও এ দিন দুপুরে এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সব চক্রান্ত ভাঙতেই হবে।’ সেই সঙ্গেই সরকার-বিরোধী যে আবহ তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় মমতার পাশাপাশি অভিষেকের সক্রিয়তা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভাঙচুরের রাতে দোষীদের গ্রেফতার চেয়ে এক্স হ্যান্ডলে মত জানানোর পর থেকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় অভিষেকের অফিস। সেই রাতে অভিষেকের দাবি ছিল, দলমত নির্বিশেষে দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ভাঙচুরের দায় সিপিএম ও বিজেপির উপরেই চাপিয়েছেন।
ধর্ষণ ও খুনের পরে হাসপাতালে সংস্কার এবং তড়িঘড়ি অধ্যক্ষের বদলি নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই জোড়া প্রশ্নেই সরকারের দিকে আঙুল তুলেছিল। সেই পদক্ষেপগুলিকে ‘ভুল’ হিসেবে চিহ্নিত করে পরে কুণাল বলেন, “ওই রকম একটা ঘটনার পরে হাসপাতালে সংস্কারের কাজ করার যুক্তি ছিল না। নির্বোধের মতো ওই কাজে মানুষ ভুল বুঝেছেন।” একই ভাবে, যে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ঘিরে ছাত্রছাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ, তাঁকেই তাড়াহুড়ো করে ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
টানা সরকার-বিরোধী আন্দোলনে কোণঠাসা হয়েও আক্রমণাত্মক অবস্থানেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ-প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণও করেছেন। বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও এ নিয়ে প্রতিবাদে প্রথম পথে নামেন দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। পথে নামলেও মমতা অবশ্য মিছিল করেছেন বিরোধীদের পাল্টা চাপে রাখতে চেয়ে। শুক্রবার তৃণমূল নেত্রীর ডাকা মিছিলে অংশ না নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন অভিষেক। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “অভিষেক মনে করেন, শহুরে মানুষের মধ্যে দল ও সরকার সম্পর্কে ধারণা ভাল নয়। সাম্প্রতিক হকার উচ্ছেদ এবং তার পরে আরজি কর হাসপাতালের এই ঘটনায় তা আরও গভীর হয়েছে।”
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “অভিষেক ভীষণ সক্রিয়। ওর চোখটা ভাল যাচ্ছে না। একুশে জুলাই সমাবেশে ওকে চোখের ব্যাপারে যত্ন নিতে বলেছিলাম। তৃণমূলে কোনও বিভাজন নেই। সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক।”