অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তিনি তৃণমূলের নবীন প্রজন্মের প্রধান মুখ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলে ভাঙনের সময় পুরনোদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বুঝিয়েছিলেন তিনি পুরনোদের প্রাপ্য ‘মর্যাদা’ দেন না। সেই সব ঘটনার জের অনেক দূর গড়িয়েছিল। বিধানসভা ভোটে বিজেপি বিপর্যস্ত হওয়ার পরে তৃণমূলের দিকে এখন ফিরে আসার স্রোত। আর সেখানে দাঁড়িয়েই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘পুরনো কর্মীদের গায়ে আঁচড় পড়লে ছেড়ে কথা বলব না।’’
পর্যবেক্ষকদের মতে অভিষেকের অবস্থান রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই পুরনোদের ‘প্রাপ্য মর্যাদা’ দিতে চাইছেন। এমনকি অনেককে তিনি মর্যাদা ফিরিয়েও দিচ্ছেন। অন্য দিকে বিজেপি থেকে যাঁরা ফিরে আসছেন তাঁরাও অনেকেই ফিরছেন অভিষেকের হাত ধরে। এই ভারসাম্যের অঙ্কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যারাকপুরের সভায় অভিষেকের এই বার্তা সাধারণ ভাবে গোটা রাজ্যের জন্য বলেই মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা।
ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপি ছেড়ে ফিরে আসার পরে এ দিন তাঁর কেন্দ্রের শ্যামনগরে জনসভার আয়োজন করে তৃণমূল। দল ছাড়ার পরে অর্জুনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক চূড়ান্ত তিক্ততায় পৌঁছেছিল। স্থানীয় স্তরেও বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত লেগেই ছিল। এই অবস্থায় অর্জুনকে দলে ফেরালেও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মনোভাব বুঝেই অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘কর্মীরাই দলের সব থেকে বড় সম্পদ। বিজেপির কাছে অর্থ, এজেন্সি আছে, কিন্তু তৃণমূলের কর্মীদের যে আবেগ তা নেই।’’ কর্মী- সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আপনাদের আবেগ বুঝি। তবু বলব, যদি কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে ঢোকে তবে তাকে নিজের আদর্শ বদলে আসতে হবে।’’
অর্জুনের প্রত্যাবর্তনের পরে স্থানীয় সংগঠনে ভারসাম্যের সেই বার্তা দিতেই সেখানে হাজির ছিলেন অভিষেক। মঞ্চে অর্জুনকে পাশে বসিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘গত তিন বছরে তৃণমূল কংগ্রেস বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ এর পরে যারা ভেবেছিল গুন্ডামি করে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলকে অশান্ত করব, আজকে সেই দল চূর্ণবিচূর্ণ। ২০১৯ এর ২০মে তৃণমূল কর্মীদের বাড়িছাড়া করেছিল। আর আজকে বিজেপি ছেড়ে একে একে সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পতাকার নীচে আসছে।’’
লোকসভা আসন দখলে থাকলেও বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে ব্যারাকপুরে বিজেপির শক্তি এখন অনেক কম। বিজেপি ছেড়ে আসতে আগ্রহীদের লাইনও দীর্ঘ বলে দাবি করেন অভিষেক। অভিষেকের এই দাবির জবাবে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘২০২৪ সাল পর্যন্ত তৃণমূলকে সামলে রাখুন।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।