Purulia

স্নাতক হয়ে ইতিহাস শবর কন্যার

বহির্জগত থেকে দীর্ঘদিন নিজেদের সরিয়ে রাখা শবরদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি-সহ নানা ক্ষেত্রের সুবিধা দেওয়ার কাজ চলে আসছে অনেক দিন ধরে।

Advertisement

সমীর দত্ত

বরাবাজার শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৩৫
Share:

রমনিতা শবর। —নিজস্ব চিত্র

শিক্ষাক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে তাঁরা শতাংশের হিসেবেও আসেন না। সেই খেড়িয়া-শবর জনজাতির মেয়েদের মধ্যে প্রথম বার কলেজ উত্তীর্ণ হলেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের ফুলঝোর গ্রামের মেয়ে রমনিতা শবর। এমনই দাবি করে ‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে দু’-তিন জন শবর তরুণী কলেজে ভর্তি হলেও তাঁরা নানা কারণে পড়া শেষ করতে পারেননি। লোধা-শবরদের মধ্যে প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতক হয়েছিলেন চুনী কোটাল। তার কয়েক দশক পরে খেড়িয়া শবরদের মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক হলেন রমনিতা। তিনি আমাদের গর্ব।’’

Advertisement

রমনিতা বরাবাজার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পটমদা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ছিলেন। ওই কলেজের অধ্যক্ষ সুমন্ত সেন বলেন, ‘‘সম্প্রতি ফল প্রকাশ হয়েছে। রমনিতা ইতিহাসে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন। তাঁকে সংবর্ধনা জানাব।’’

বহির্জগত থেকে দীর্ঘদিন নিজেদের সরিয়ে রাখা শবরদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি-সহ নানা ক্ষেত্রের সুবিধা দেওয়ার কাজ চলে আসছে অনেক দিন ধরে। পুরুলিয়ার ‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র ওই আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়ে সাহিত্যিক মহাশ্বেতাদেবী হয়ে উঠেছিলেন ‘শবর জননী’। সমিতির সভাপতির কথায়, শবররা ধীরে ধীরে মূল স্রোতে ফিরছেন। স্কুল-কলেজেও যাচ্ছেন অনেকে। তবে সার্বিক ভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁদের সংখ্যা শতাংশে আসে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: জেলে চার লগ্নিকর্তার চার রোজনামচা

আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব নিয়ে আশ্বাস বিজেপির মন্ত্রী ও নেতার

রবিবার দুপুরে ফুলঝোরের বাড়িতে মেয়ে রমনিতাকে পাশে নিয়ে বেহুলা শবর জানান, তাঁর স্বামী মহাদেব শবর মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছিলেন। এখন নিজেদের জমিতে চাষ করেন। তাঁদের তিন মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে বড় রমনিতা। ছোট মেয়েও পড়ছে। তবে বাকি দু’জন ছেড়ে দিয়েছে।

বেহুলাদেবী বলেন, ‘‘চান্ডিলের চৌকা গ্রামে থেকে সেখানকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় রমনিতা প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে। পুরুলিয়ার কস্তুরবা হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছে হস্টেলে থেকে। এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার সুবিধা থাকায় পটমদার কলেজে মেয়েকে পড়াই। মেয়ে আমাদের মুখ রেখেছে।’’

রমনিতার কথায়, ‘‘এত দিন গৃহশিক্ষক ছাড়াই পড়াশোনা করেছি। ইচ্ছা রয়েছে এ বার পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ব। ভবিষ্যতে কলেজে শিক্ষকতা করতে চাই। কিন্তু পড়ার খরচ ভাবাচ্ছে।’’

পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রমনিতাকে আমরা সব রকম ভাবে সহযোগিতা করব।’’ আজ, সোমবার রমনিতাকে তিনি দেখা করতে ডেকেছেন। সিধো- কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইতিহাসের স্নাতকোত্তরের ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে জেলাশাসক শবর ছাত্রীটির সম্পর্কে জানিয়েছেন। ছাত্রীটি আবেদন করলে তা আলাদা করে দেখব।’’

ফুলঝোরের ৩৫ ঘর শবরদের মধ্যে অনেকে পড়াশোনা করছেন। তাঁদের মধ্যে পটমদা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া বসুমতী শবর ও শকুন্তলা শবরেরা বলেন, ‘‘রমনিতাই আমাদের প্রেরণা।’’ সামাজিক বিষয়ের গবেষক কুমার রাণার মতে, ‘‘চুনীর মতোই এখনও রমনিতাদের একক ভাবে লড়াই করতে হচ্ছে। তার মানে সকলের শিক্ষার অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কার্যত স্বীকার করে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement