স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে পাপিয়া রায়। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষক দিবসে ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে ‘ব্যর্থ’ বলে ঘোষণা করলেন দিদিমণি। দাবি, তাঁর স্কুলের পড়ুয়ারা শিক্ষক দিবসে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, তাতে বর্তমান সঙ্কট (আর জি কর-কাণ্ড) নিয়ে প্রতিবাদের লেশমাত্র নেই। নিলেন ‘দায়’। কারণ, তাঁর মনে হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের সমাজ সচেতন করে তুলতে পারেননি। তাই শিক্ষক হিসাবে ‘ব্যর্থ’। তিনি কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়ি সীতানাথ হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা পাপিয়া রায়। তাঁর বক্তব্যের এই ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। যা অনেককে মনে করিয়েছে, হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের আর এক প্রতিবাদী শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতিকে। তবে পাপিয়ার ‘মূল্যায়নে’ সহমত নন অনেক শিক্ষক। কেউ কেউ ‘রাজনীতিও’ দেখছেন।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, অনুষ্ঠান মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে ওই শিক্ষিকা বলেছেন, “১৩ বছরে হয়তো তোদের কিছুই শেখাতে পারিনি। তোরা আমাকে ক্ষমা করিস না। আমি তোদের যোগ্য নই।” তাঁর বক্তব্য: ‘‘আমাদের রাজ্য তথা দেশ এই মুহূর্তে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আর যা-ই হোক, কোনও সাংস্কৃতিক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে কোনও শিক্ষিত মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারে না। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে কী ভাবে মোকাবিলা করতে হয়, কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে হয়, শেখাতে পারিনি।’’
পড়ুয়াদের তিনি বলেন, ‘‘এ বছরে আমরা একটা সুন্দর নাটকের আয়োজন, পথনাটিকা করতে পারতাম। অন্তত একটা করে কালো ব্যাজ ধারণ করতে পারতাম, এটা বোঝানোর জন্য যে আমরাও সামাজিক ভাবে সচেতন। তোদের কোনও দোষ নেই, দোষ আমাদের, দোষ আমার। ব্যক্তিগত ভাবে দায় স্বীকার করি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পরের বছর সিলেবাসের বাইরে কিছু শেখাতে পারলে, নিশ্চয়ই সংবর্ধনা নেব।’’ ফোনে যোগাযোগ করা হলে শনিবার পাপিয়া বলেন, ‘‘যে মূহূর্তে যেটা বলা প্রয়োজন মনে হয়েছে, তা-ই বলেছি। সেটা শুধু স্কুলের শিক্ষক হিসেবেই।”
২০১১ সাল থেকে ওই স্কুলে ইংরেজির শিক্ষিকা বছর ত্রিশের পাপিয়া। কোচবিহার শহরে বাড়ি। পড়াশোনা কোচবিহারের নিউটাউন গার্লস হাই স্কুলে। ইংরেজিতে স্নাতক বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজ থেকে। পরে স্নাতকোত্তর করেছেন। থাকেন ময়নাগুড়িতে। শিক্ষিকা হিসাবে সুনাম রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কও খুব ভাল।
পাপিয়ার মন্তব্য প্রসঙ্গে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিবস রায় বলেন, “শিক্ষক হিসেবে নিজের একশো শতাংশ উজাড় করে দিই। তবে কারও ব্যক্তিগত মত নিয়ে মন্তব্য করব না।” তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদক মানস ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “হয়তো অজান্তেই ব্যতিক্রমী শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে, এমন রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন, যা দুর্ভাগ্যজনক।” তবে পাপিয়া যে শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেই এবিটিএ-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক সুজিত দাসের বক্তব্য, ‘‘উনি ঠিক কথাই বলেছেন।”
পাপিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন কোচবিহার নিউটাউন গার্লস হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা অন্নময়ী অধিকারী। তিনি বলেন, “ও ভুল কিছু বলেনি।” বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজের ইংরেজির শিক্ষক জয়দীপ সরকার বলেন, “কলেজ জীবনে একেবারে শান্ত ছাত্রী ছিল। ওর ওই বক্তব্য খুবই সাহসী।” এলাকার একাধিক অভিভাবকের দাবি, ‘‘দিদিমণির কথাগুলো মনে থাকবে।’’