—প্রতীকী ছবি।
মাইলের পর মাইল হেঁটে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে শব্দ শুনে রেললাইন পরীক্ষার দিন শেষ।
তার বদলে রেললাইনের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলা বিশেষ যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা আলট্রাসনিক শব্দের তরঙ্গ নিখুঁত ভাবে হদিস দিচ্ছে রেললাইনের গড়বড়ের। ঠিক যে ভাবে আলট্রাসনোগ্রাফি করে হদিস পাওয়া যায় দেহের অভ্যন্তরের অসুখের।
নতুন এই ব্যবস্থায় লাইন পরীক্ষা করার কষ্টসাধ্য কাজের ঝক্কি যেমন কমেছে, তেমনই রেললাইনের অসুখের তীব্রতাও নিখুঁত ভাবে বলে দিচ্ছে যন্ত্র। দীর্ঘ পথে নজরদারি চালাতে ওই ব্যবস্থার উপরেই আস্থা রাখছে শিয়ালদহ-সহ পূর্ব রেলের অন্যান্য শাখা।
প্রচণ্ড গরমে রেল লাইন প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি শীতে ঠান্ডায় লাইন সঙ্কুচিত হয়। গরমের তুলনায় শীতে রেললাইনে ফাটলের ঘটনা বেশি ঘটে। বহু বছর ধরে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে শব্দের তারতম্য শুনে লাইনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হত। ওই ব্যবস্থায় ভুল ত্রুটিও ঘটত। সেই ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার নজিরও নেহাত কম নেই।
আলট্রাসনিক ফ্ল ডিটেকশন (ইউএসএফডি) যন্ত্র বিশেষ ধরনের শব্দতরঙ্গ তৈরি করে। ওই শব্দতরঙ্গের সাহায্যে রেললাইনে কী ধরণের কম্পন বা অনুনাদ তৈরি হচ্ছে তা নিখুঁত পরিমাপ করা যায়। দু’টি লাইনের জোড়ের মধ্যে থাকা ওয়েল্ডিংও পরীক্ষা করা যায় ওই যন্ত্রের মাধ্যমে। লাইনে কোনও সূক্ষ্ম ফাটল থাকলেও কম্পনের চরিত্র বদলে যায়। বেশ কিছু যন্ত্রে বসানো ক্যামেরার ছবি বিশ্লেষণ করে লাইনের অন্যান্য ত্রুটির হদিসও পাওয়া যায় বলে জানাচ্ছেন রেলের আধিকারিকেরা। ফলাফল খতিয়ে দেখে রেললাইনের গায়ে সেই অনুযায়ী লাল রং করে সংকেত লিখে দেওয়া হয়। লাইন মেরামতির দায়িত্বে থাকা দল ওই সংকেত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়। কোথাও রেললাইন বদল করা হয়। কোথাও ফিশ-প্লেট বসানো হয়, কোথাও ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ ডিভিশনে রেললাইন পরীক্ষার জন্য ১২টি যন্ত্র রয়েছে। আরও ছ’টি যন্ত্র রয়েছে ওয়েল্ডিং পরীক্ষার জন্য। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে আরও চারটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ১২ জন ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে ওই কাজ হয়। প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার রেললাইনে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে খবর। এ ছাড়াও পূর্ব রেলের হাওড়া, আসানসোল, মালদহ শাখা ওই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। নয়া প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রেললাইনে নজরদারি আগের চেয়ে নিখুঁত হওয়ার পাশাপাশি ওই কাজে বিপুল কর্মী নিয়োগের চাপও কমেছে।