প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষায় বসেনি। পেরোতে হয়নি পরীক্ষার গণ্ডি। অথচ পরীক্ষার উত্তীর্ণ হওয়ার ‘পুরস্কার’ মিলছে। তেমনই ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের সেচ দফতরে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দফতর সার্কুলার দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে চিফ ইঞ্জিনিয়ার, সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার এবং এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশ দিয়েছে। একই নির্দেশ পেয়েছেন দফতরের ডিরেক্টর ও রেভিনিউ আধিকারিকরা।
নিয়মানুসারে, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (এটিআই) তত্ত্বাবধানে হওয়া টাইপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, তবে বছরে তিন শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বৃদ্ধি হয় লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট (এলডিএ), লোয়ার ডিভিশন ক্লার্কদের (এলডিসি)। সম্প্রতি সেচ দফতরে তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। যে পরীক্ষায় পাশ করা বাধ্যতামূলক, তা পাশ করার আগে কিছু এলডিএ, এলডিসি ইনক্রিমেন্ট পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
এই ঘটনা নজরে আসার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য দিন কয়েক আগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে সার্কুলার পাঠিয়েছেন ডিরেক্টর (পার্সোনাল) ও সেচ ও জলসম্পদ ডিরেক্টরেটের এক্স অফিসিয়ো কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক। তবে এই সার্কুলারটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া এলডিএ বা এলডিসিদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ, ২০১৭ সালে অর্থ দফতরের নির্দেশ অনুসারে, ওই সময়ে নিয়োগ হওয়া কর্মীরা কম্পিউটারে টাইপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই চাকরিতে যোগ দেন।
একদা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে টাইপিস্ট নামক পদ থাকলেও এখন আর তা নেই। তাই নানা ক্ষেত্রে টাইপ নিজেদের করতে হয় ক্লার্ককে। সে কারণে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক জানিয়ে কয়েক বছর আগে নির্দেশও দিয়েছিল অর্থ দফতর। তার পরেও কী করে পরীক্ষায় পাশ না করে এলডিএ বা এলডিসি-দের এই আর্থিক সুবিধা প্রদান করেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে প্রশাসনের অন্দরে। এটা কি নিয়ম না জানার ‘অজ্ঞতা’ নাকি ‘ইচ্ছাকৃত’— তা নিয়েও চর্চা চলছে।
পরীক্ষায় না পাশ করে যাঁরা আর্থিক সুবিধা পেলেন তাঁদের কী হতে পারে? প্রথমত, সুবিধাপ্রাপ্তদের পরীক্ষায় বসতে হবে। পরীক্ষায় পাশ করলে প্রাপ্ত সুবিধায় কোনও কাটছাঁট হবে না। আর পাশ না করলে প্রাপ্ত সুবিধা স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকের মতে, একবার সুবিধা পেয়ে গেলে তা ছাড়তে চান না অনেকে। সেই সুবিধা কমে গেলে অনেক সময় কর্মীদের মধ্যে আইনি পথে হাঁটার প্রবণতা দেখা যায়। তাই ‘অনিয়ম’কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সার্কুলার দিয়েছে সেচ দফতর। তৃণমূল অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের বর্ষীয়ান নেতা মনোজ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সরকারি আদেশনামা কার্যকরী করার জন্য সব দফতরের সর্বস্তরের কর্মী-আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে আর্থিক সুবিধার প্রশ্নে এই ধরণের ভুলে লাগাম পড়বে না।’’