আহত পুলিশ কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আপাতত তিনি স্থিতিশীল। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট। গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক পুলিশকর্মীও। বসিরহাটের শাকচুড়ার বাজারে সোমবার রাত ১০টা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটে। আর তার জেরে পুরো এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার রাত থেকেই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলার পুলিশ সুপার জবি থমাস এবং অন্য পুলিশ আধিকারিকরা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তরফে তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
শাকচুড়া বাজারের টাকি রোডের উপরে তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয় রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার রাতে সেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রথমে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ শুরু হয়। সেখান থেকে একে অপরের সঙ্গে বচসা জড়িয়ে পড়ে দুই গোষ্ঠী। এর পর দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও শুরু হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সোমবার রাত দশটা নাগাদ খবর পেয়ে গন্ডগোল মেটাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বসিরহাট থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। সেখানে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গুলিতেই জখম হন অনন্তপুর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল প্রভাস সর্দার। গুলি এসে লাগে ৪২ বছর বয়সি প্রভাসের বাম কাঁধে। পুলিশও শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এই নিয়ে এলাকায় যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
পুলিশ কনস্টেবল প্রভাসকে বসিরহাটের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে আহত পুলিশকর্মীর অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ হয়েছে। কাঁধের মধ্যে ঢুকে থাকা বুলেট অপারেশন করে বার করেছেন চিকিৎসকরা। তবে এখনও ওই পুলিশকর্মীর জ্ঞান ফেরেনি বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। জ্ঞান ফিরলে তাঁকে ওয়ার্ডে দেওয়া হবে বলে পরিবার সূত্র জানা গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মী ভবতোষ দাস বলেন, ‘‘গন্ডগোল চলছে খবর পেয়ে আমরা ওখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়েছিলাম। আমকা ছ’সাত ঢিল ছোড়ার পর গুলি চালায়। হঠাৎ দেখি আমাদের পুলিশ কনস্টেবল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। কিসের জন্য এই গন্ডগোল এবং কেন এই ঝামেলা, তা আমরা জানি না।’’
এই নিয়ে মঙ্গলবার সকালে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সোমবারের রাতের ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা সিরাজুল ইসলাম বেশে-সহ ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিরাজুল বসিরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নজরুল হকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেও পরিচিত।
তৃণমূল কর্মী কুতুবুদ্দিন গাজী জানান, ‘‘আমাদের এক তৃণমূলের নেতা বাজারে ছিল। হঠাৎ করে সিরাজুলের অফিস থেকে বেশ কিছু জন বেরিয়ে এসে তাঁকে মারধর করে এবং বন্দুক দেখায়। আমরা ছুটে গেলে আমাদেরও মারধর করা হয়। আমরা ওখান থেকে সরে আসি। এর পর পুলিশের গাড়ি আসে। সেই গাড়িতে চার জন পুলিশ ছিল। তৃণমূলের অফিসে পুলিশ ঢুকতে যাওয়ার সময় গুলির আওয়াজ শোনা যায়। চার জনের মধ্যে এক জন পুলিশ কর্মী গুরুতর আহত হন। সিরাজুলের ছোট ছেলে বা ভাইয়ের হাতে একটা বন্দুকও দেখা যায়। পুলিশের লাগা গুলি সেখান থেকেই চালানো হয়েছে কি না বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এর পর পুলিশের বিশাল বাহিনী এসে তৃণমূলের ওই অফিস ঘিরে নেয়। ওই কার্যালয় থেকে পুলিশ বেশ কয়েকটি বন্দুকও উদ্ধার করেছে। পুলিশ অফিস থেকে সকলকেই আটক করে নিয়ে গিয়েছে। আমরা চাই এই ঘটনার সঠিক বিচার হোক।’’
বিরোধী গেরুয়া পক্ষের দাবি, যে পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা দেবে, সেই পুলিশ নিজেই নিরাপত্তাহীন। এই হামলার কারণ কী, তার জবাব শাসক দলকে দিতেই হবে বলেও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন।