শেঠ-তালুকে ভোটের ভারে দ্বিধা বিজেপির

রাজ্যে পরিবর্তনের পরেও হলদিয়া পুরসভা হাতে রেখেছিল সিপিএম। পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন লক্ষ্মণ-জায়া, অধুনা প্রয়াত তমালিকা পণ্ডা শেঠ। তৃণমূল অবশ্য গত পুরভোটের পর থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিল বোর্ড দখল করে নেওয়ার।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০৩:১২
Share:

এক পা এগিয়েও এখন ভাবতে হচ্ছে বিজেপি-কে!

Advertisement

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে দলে স্বাগতই জানিয়েছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, নেতা তো আকাশ থেকে পড়বে না! রাজ্যে সংগঠনকে বাড়াতে গেলে অন্যান্য দল থেকে কিছু পুরনো মুখ নিতেই হবে। সেই অঙ্কেই বিজেপি-তে জায়গা পেয়েছিলেন সিপিএমের এক কালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। কিন্তু দলের মধ্যেই বিতর্কের জেরে সামনের হলদিয়া পুরভোটে লক্ষ্মণবাবুকে কাণ্ডারী করতে এখন প্রবল দ্বিধায় পড়েছে গেরুয়া শিবির। দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই তাঁর হাতে নির্দিষ্ট করে পুরভোটের দায়িত্ব ছাড়তে
রাজি নন।

রাজ্যে পরিবর্তনের পরেও হলদিয়া পুরসভা হাতে রেখেছিল সিপিএম। পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন লক্ষ্মণ-জায়া, অধুনা প্রয়াত তমালিকা পণ্ডা শেঠ। তৃণমূল অবশ্য গত পুরভোটের পর থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিল বোর্ড দখল করে নেওয়ার। কথায় কথায় বিক্ষোভ, কাউন্সিলরদের বাধা— এ সব নানা কাণ্ডের পরে শেষমেশ তারা বোর্ড দখলে নিতে সফল হয়। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মত, লক্ষ্মণবাবু হলদিয়াকে হাতের তেলোর মতো চেনেন। তাঁকে দায়িত্ব দিলে তৃণমূলকে পুরভোটে লড়াইয়ে ফেলতে পারবে বিজেপি। কিন্তু রাজ্য নেতাদের বড় অংশের পাল্টা যুক্তি, প্রাক্তন সাংসদকে পুরভোটের মুখ করলেই নন্দীগ্রামের কালো অধ্যায় তুলে এনে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে তৃণমূল। যদিও নন্দীগ্রামের ঘটনায় বিজেপি-র কোনও ভূমিকা ছিল না!

Advertisement

এর মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছে সদ্য পূর্ব মেদিনীপুর সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা। লক্ষ্মণবাবুর নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারি সংস্থার পরিচালিত কলেজের বিরুদ্ধে শিক্ষা দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জেরে পুরভোটের মুখে প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ নিয়ে ফের হইচই করারও সুযোগ পাচ্ছে তৃণমূল। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘বিজেপি লক্ষ্মণবাবুকে সেনাপতি করে ভোটে নামলে আমাদেরই ভাল! নন্দীগ্রাম তো আছেই, সঙ্গে দুর্নীতির কথাও মানুষ জানেন।’’ যদিও রাজ্য বিজেপি-র এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য, ‘‘হলদিয়ার ভোটে লক্ষ্মণবাবু তো থাকবেনই। তিনি এই দলে আছেন। কিন্তু তাঁকে আলাদা করে দায়িত্ব দেওয়া হবে না।’’ বিষয়টির ফয়সালার আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলছেন না কেউ।

মুখ খোলেননি লক্ষ্মণবাবুও। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরে যে দু’টি পুরসভায় অগস্টে ভোট, সেই হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় তাঁদের এখনও কিছু লোকজন এবং প্রভাব আছে। পুরভোটে দায়িত্ব পেলে অন্তত সিপিএমকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি-কে তুলে আনার প্রাণপণ লড়াই চালাবেন। সিপিএম যে তাঁর ‘অবদান’ মনে রাখেনি, সেই জ্বালা এখনও মেটেনি লক্ষ্মণের!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement