(বাঁ দিকে) আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এবং (ডান দিকে) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
ভরদুপুরে আচমকাই এক আগন্তুক ঢুকে এলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। সোজা বিচারপতির সামনে গিয়ে তাঁর হাতে গুঁজে দিলেন একটি চিরকুট। তাতে লেখা, ‘‘প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল কোথায়?’’
১৭ নম্বর কোর্টে (বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস) তখন প্রাথমিকের একটি মামলার শুনানি সবে শেষ হয়েছে। দুপুরের বিরতি নিয়ে এজলাস ছেড়ে ওঠার প্রস্তুতি শুরু করছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। হঠাৎই ওই আগন্তুক চলে আসেন বিচারপতির একেবারে সামনে। যেখানে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে একমাত্র কোর্ট অফিসারদেরই। আগন্তুক অবশ্য কোনও রকম অনুমতির অপেক্ষা করেননি। তিনি সোজা বিচারপতির সামনে গিয়ে তাঁর হাতে ধরিয়ে দেন ওই চিরকুট। মুখে বলেন, ‘‘আমি বেলা ১১টা থেকে আইনজীবী প্রিয়ঙ্কাকে খুঁজছি। দুপুর ১টা পর্যন্ত খুঁজলাম। কিন্তু পাচ্ছি না।’’
ভরা আদালতে হঠাৎ এমন ঘটনায় চমকে যান উপস্থিত আইনজীবী থেকে শুরু করে বিচারপতি। আগন্তুককে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি কী ভাবে বলব? এখান থেকে কি এ বিষয়ে জানানো হয়? আপনি আইনজীবীদের বলুন। ওঁরা বলতে পারেন।’’ কিন্তু বিচারপতির সেই জবাব শুনেও নাছোড় আগন্তুক। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘আপনিই বলুন না। তা হলে ভাল হয়। আমি অনেক খুঁজেছি, পাচ্ছি না।’’
এই কথোপকথনের মাঝেই বিচারপতির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে ভেবে কোর্ট রুমের বাইরে থেকে ভিতরে চলে আসেন এক পুলিশ আধিকারিক। এজলাসে চলে আসেন হাই কোর্টের শেরিফও। ওই ব্যক্তিকে বের করে আনা হয় এজলাস থেকে। পরে তিনি জানান, তাঁর নাম সুনীলকুমার পাল। পেশায় চিকিৎসক। বাড়ি রিষড়ায়। তবে আইনজীবী প্রিয়ঙ্কাকে তিনি কেন খুঁজছিলেন? কেনই বা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়েছিলেন সে ব্যাপারে কিছু বলেননি ওই চিকিৎসক।
প্রসঙ্গত, প্রিয়ঙ্কা পেশায় আইনজীবী আবার বিজেপির নেত্রীও। তাঁকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভবানীপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিলবিজেপি। তার পর থেকে সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে প্রিয়ঙ্কা। মাঝে মধ্যেই বিজেপির মহিলা দলের সদস্য হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যান প্রিয়ঙ্কা। একদা বিজেপির প্রাক্তনী গায়ক বাবুল সুপ্রিয়র ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রিয়ঙ্কা। শোনা যায়, বাবুলই বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন প্রিয়ঙ্কাকে। পরে বাবুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলেও প্রিয়ঙ্কা রয়ে গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরেই। তবে আইনজীবীর পেশাটি ছাড়েননি তিনি।