হাসপাতাল উদ্বোধন করছেন গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের একটি পরিবার জমি দিয়েছিল। বাকি গ্রামবাসীরা মিলে বানিয়ে ফেললেন তেতলা ভবন। আনা হল চিকিৎসা সরঞ্জাম। মেহনতি মানুষের অর্থ এবং শ্রমে হুগলির হরিপালেও চালু হয়ে গেল রাজ্যের অষ্টম শ্রমজীবী হাসপাতাল।
সম্প্রতি এখানকার গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল ধামসা-মাদল বাজিয়ে পাঁচগাছিয়া গ্রামে হাসপাতালে আসে। মহিলারা শাঁখ বাজান। উলুধ্বনি দেন। এখানকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দানের জমিতে হাসপাতাল-ভবন গড়ে উঠেছে। উদ্বোধক ছিলেন সবাই। বিশাল হোর্ডিংয়ে কেউ সই করে, কেউ টিপছাপ দিয়ে উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং স্থানীয় বিধায়ক করবী মান্না।
হরিপালের প্রত্যন্ত এই এলাকা কৃষিনির্ভর। চিকিৎসায় ভরসা বলতে এতদিন ছিল কয়েক কিলোমিটার দূরের হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতাল। সেখানে সব চিকিৎসা মেলে না। লোকজনকে যেতে হত শ্রীরামপুর বা চুঁচুড়ায়। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে ঝঞ্ঝাটের একশেষ হত।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রমজীবী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বৈঠকে হাসপাতালের সলতে পাকানোর শুরু। দু’মাস পরেই বহির্বিভাগ চালু হয় জমিদাতা পরিবারের টালির বাড়িতে। অন্তর্বিভাগ তৈরির কাজে হাত পড়ে গত বছরের ৩ এপ্রিল। কেউ গায়ে-গতরে খেটেছেন। কেউ সরঞ্জাম দিয়েছেন। কেউ অর্থ।
কর্তৃপক্ষ জানান, তেতলার কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। শীঘ্রই লিফট বসবে। আপাতত ৩০টি শয্যা থাকছে। তার মধ্যে ৪টি আইসিইউ শয্যা। মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি নেওয়া হবে। ধীরে ধীরে অস্থি, শল্য, হৃদরোগ, স্ত্রী-রোগ ও প্রসূতি-সহ অন্যান্য বিভাগ চালু হবে। অস্ত্রোপচারও হবে। ব্লাডব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
হাসপাতালের সম্পাদক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র পেলেই রোগী ভর্তি শুরু হবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেও চিকিৎসা মিলবে।’’ সভাপতি তুলসীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। শ্রমজীবীর কার্যকরী সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম ও শহরে শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়া। যেখানে গণউদ্যোগে যথাযথ খরচে মানুষ পরিষেবা পাবেন। সর্বস্বান্ত হতে হবে না।’’
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শিখা পয়াল বলছিলেন, ‘‘আমরা অর্থ আর শ্রম দিচ্ছি। আত্মীয়, পরিচিতরাও সাহায্য করছেন।’’ ভাগচাষি বাসুদেব মান, খেতমজুর শিবু শবর, ফুল সাজানোর কাজ করা শুভঙ্কর মাইতি, রংমিস্ত্রি বিশ্বজিৎ শীটের মতো অনেক গ্রামবাসী হাসপাতালের জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘আমরা একটা হাসপাতাল বানিয়ে ফেললাম। স্বপ্ন মনে হচ্ছে। কী আনন্দ!’’
হাওড়ার বেলুড়েও শ্রমজীবী হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে খাসজমিতে জনস্বার্থে হাসপাতালটির সম্প্রসারণের জন্য সরকারি প্রক্রিয়ার দাবিতে সম্প্রতি গণ-সমাবেশ হয়। হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার জানান, সেখানে পড়ে থাকা আরও ১৬ বিঘা খাসজমি সরকারের কাছে দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের আশ্বাস মিলেছে। বেলুড়ে জমিজট দ্রুত ছাড়িয়ে জমি হাসপাতালকে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিশ্রুতি মন্ত্রী বেচারাম মান্নাও দিয়েছেন। গৌতম বলেন, ‘‘ওই জমি পেলে, হাসপাতালের পরিষেবা বাড়ানো গেলে আরও বহু মানুষ উপকৃত হবেন।’’