২০ লক্ষ টাকা দিলেই তদন্তে ছাড় পাইয়ে দেবেন। একটি বেসরকারি সংস্থাকে এমনটাই টোপ দিয়েছিলেন হলদিয়া বন্দরের পরিষেবা কর কমিশনার জি শ্রী হর্ষ। ১৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। ঘুষের শেষ কিস্তি হিসেবে বাকি ছিল ৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকা নিতে গিয়েই কলকাতায় সিবিআইয়ের জালে হাতেনাতে ধরা পড়লেন ওই সরকারি আধিকারিক।
হলদিয়া ফাইভ স্টার শিপিং এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড নামের যে বেসরকারি সংস্থার থেকে তিনি ঘুষ নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ, সেই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর শেখ আসগর আলিকেও হলদিয়া থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের খবর, পারভেজ আখতার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে আসগর শুক্রবার গভীর রাতে কলকাতায় হর্ষের সরকারি বাসভবনে ঘুষের টাকা পাঠান। হর্ষের হয়ে টাকা নিতেন তাঁর সহকারী জে প্রশান্ত কুমার। হর্ষের সরকারি বাসভবনেই জাল পাতে সিবিআই। এবং সেখানেই বমাল গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরও প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। হর্ষের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাস বই ও চেক বই-ও মিলেছে সেখানে। গত কাল রাত ১১টা থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত সিবিআইয়ের একটি দল তল্লাশি চালিয়েছে হলদিয়ায় বেসরকারি সংস্থাটির অফিসেও।
এখানেই শেষ নয়। কলকাতা, হলদিয়ার পাশাপাশি অন্ধ্রের হায়দরাবাদ ও গুন্টুরের ১৩টি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। ধৃত চার জনকে আজ আলিপুরের বিশেষ বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। তাদের পাঁচ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিবিআই মুখপাত্র জানান, এই বেসরকারি সংস্থাটি হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের কাজ করত। পরিষেবা কর বাবদ বহু টাকা বকেয়া থাকায় বন্দরের পরিষেবা কর কমিশনার জি শ্রী হর্ষকে এর তদন্তভার দেওয়া হয়। কাস্টমস ও সেন্ট্রাল এক্সাইজের এই অফিসার তদন্তে ওই সংস্থাকেই সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ চান বলে অভিযোগ।
বেসরকারি সংস্থাটি বন্দর এলাকায় বড় মাপের ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত। ওই সংস্থার প্রধান, ধৃত শেখ আসগর আলির বাবা শেখ মুজফ্ফর বাম আমলে সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এখন অবশ্য শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রেখে চলেন। সম্প্রতি হলদিয়া বন্দরের পণ্য খালাসের সমস্যাতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর।
ছেলের গ্রেফতারির খবর মানতে চাননি মুজফ্ফর। বলেন, ‘‘পরিষেবা কর নিয়ে তিন মাস ধরে আমাদের সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। সেই তদন্তেই সিবিআই এসেছিল। কলকাতাতেও ডেকে পাঠায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কোনও এক জন ডিরেক্টরকে যেতেই হত। আমার বয়স হয়েছে বলে ছেলে আসগর গিয়েছে।’’
সিবিআইয়ের বক্তব্য, হর্ষ, আসগর ও অন্য দু’জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০-বি এবং দুর্নীতি দমন আইনের একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।