—ফাইল চিত্র।
চালকের আসনে বসে চোখ লেগে এসেছিল মোমিন আলির। সেই ঢুলুনির খেসারত ১৮ কোটি টাকা!
সময়টা ২০১৫-র ২২ ডিসেম্বর। কলকাতা বিমানবন্দরে জেট বিমান সংস্থার যাত্রিবাস চালাতেন মোমিন। সে দিন ভোরেও দুই বিমানকর্মীকে নিয়ে জেটেরই একটি বিমানের কাছে যাচ্ছিলেন মোমিন। আচমকা চোখ বুজে আসে তাঁর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাস তত ক্ষণে নির্দিষ্ট লেন ছেড়ে বেরিয়ে সোজা ধাক্কা মারে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে। শিলচরগামী সেই বিমানে সওয়ার ছিলেন ৪৪ জন। কেউ হতাহত না হলেও, সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সেই বিমানটি সারাতে অন্তত ১৮ কোটি টাকার ধাক্কা!
এয়ার ইন্ডিয়ার সহযোগী সংস্থা অ্যালায়েন্সের ওই বিমানটি ফ্রান্সের টুলুস-এর এটিআর সংস্থার তৈরি। বাসটি বিমানের ডান দিকের ডানার নীচ দিয়ে ধাক্কা মেরেছিল ইঞ্জিনকে। ওই অবস্থাতেই বাসটি আটকে যায় বিমানের সঙ্গে। বেশ কিছু দিন পরে বিমানের তলায় বেলুন ঢুকিয়ে বাসটিকে সরানো হয়। লাখ দুয়েক টাকায় সারানো হয় বাসটিকে। ফের তা চলতে শুরু করে বিমানবন্দরে।
আর বিমানটি? দুর্ঘটনার পরেই এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, এটিআর-৪২ বিমানের ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারবেন কেবল ফ্রান্সের ইঞ্জিনিয়ারেরাই। দুর্ঘটনার বেশ কিছু দিন পরে ইঞ্জিনিয়ারেরা এসে বিমানটি দেখে যান। সম্প্রতি তাঁরাই ফ্রান্স থেকে জানিয়েছেন, বাসের
ধাক্কায় বিমানের ওই ক্ষতির পরিমাণ।
ক্ষতির অঙ্ক শুনে চিন্তায় পড়েছেন সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরা। সংস্থা জানিয়েছে, নতুন বিমানের দাম ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। তা হলে? এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তা অনিল মেটা শুক্রবার জানান, বিমানটিকে সারানো হবে, নাকি বাতিল করা হবে তা একটি কমিটি খতিয়ে দেখছে। জেটের কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, জেট তা দেয়নি। নতুন করে ক্ষতিপুরণ চাওয়া হবে কি না, তাও ঠিক করবে কমিটি। শীঘ্রই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিমা সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
মোমিনের কী হাল? ওই দুর্ঘটনার পরে মোমিনকে আর বিমানবন্দরের বাস চালাতে দেওয়া হয়নি। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘কী করে বুঝব, এত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে!’’ ফের স্বীকার করেন, সারা রাত ডিউটি করার পরে ভোরের দিকে চোখ বুজে এসেছিল। এখন তিনি ছোট গাড়ি চালান। বিমানকে ধাক্কা মারার মামলা এখনও চলছে। ৩১ জুন ব্যারাকপুর আদালতে মোমিনকে হাজিরা দিতে হয়েছিল। ফের যেতে হবে ডিসেম্বরে।
গত বছর ওই এটিআর-৪২ বিমানটি বসে যাওয়ার পরে এই মূহূর্তে কলকাতায় একটিই এটিআর-৪২ বিমান রয়েছে। সবেধন নীলমণি ওই বিমান সারা দিন কলকাতা থেকে শিলং, গুয়াহাটি উড়ে বেড়ায়। বিমানসংস্থার চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি সম্প্রতি কলকাতায় এসে জানিয়ে গিয়েছেন, তুলনায় নতুন এবং বড় এটিআর-৭২ বিমান নিয়ে আসা হবে কলকাতায়। পুরনো এটিআর-৪২ বিমান গুয়াহাটিতে রেখে উত্তর-পূর্ব ভারতে চালানো হবে। সে ক্ষেত্রে কি ১৮ কোটি টাকা খরচ করে ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি সারিয়ে সেটিকেই গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হবে? আপাতত সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন।