Suicide

facebook live: ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা ব্যবসায়ীর, ১৭ মিনিটেও বাঁচানো গেল না কেন! প্রশ্ন

আবুর ফেসবুক লাইভ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানিয়েছেন, কথা বলতে বলতে নিরন্তর চোখের জল ফেলেছেন আবু। চশমার কাচ বার বার ঝাপসা হয়েছে তাঁর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৩৪
Share:

আবু মহসিন খান।

লাইভ ভিডিয়োটি চলেছিল ১৭ মিনিট ধরে। আত্মহত্যা করবেন, সে কথা বলার পর আরও প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেছিলেন মানুষটি। তারপরও তাঁকে আটকানো গেল না। জরুরি ভিত্তিতে করা ফোন পেয়ে পুলিশ যখন তাঁর বাড়ির দরজায় গিয়ে পৌঁছল, তখন আর তিনি নেই।

দরজা খুলেই রেখেছিলেন। বাইরে একটি সাদা কাগজে রেখে গিয়েছিলেন ভিতরে ঢোকার লিখিত অনুমতিও। পুলিশ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে নিষ্প্রাণ দেহ। পাশে রাখা ছিল একটি সাদা কাপড়। যা তাঁর শেষ শয্যায় ব্যবহার করা হবে। এমনকি কোথায় তিনি শায়িত হতে চান, তার নির্দেশও লেখা ছিল একটি কাগজে। এমন পরিকল্পিত আত্মহত্যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন ওই ব্যক্তির পরিচিতরা।

ঘটনাটি বাংলাদেশের। ওই ব্যক্তির নাম আবু মহসিন খান। বয়স ৫৮। পেশায় ব্যবসায়ী আবুর বাড়ি ঢাকার ধানমণ্ডিতে। তবে সেখানে তাঁর কোনও নিকটাত্মীয় থাকেন না। আবুর একমাত্র ছেলে তাঁর মাকে নিয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। মেয়ের বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশেরই এক চিত্রতারকা রিয়াজের সঙ্গে। লাইভ ভিডিয়োয় নিজের একাকিত্বের কথা বলেছেন আবু। জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি ক্যানসারের রোগী। যদি কোনওদিন বাড়ির মধ্যেই তাঁর মৃত্যুও হত, তবু কেউ সে কথা জানতে পারত না। কারণ কেউ তাঁর খোঁজই রাখে না।

আবুর ফেসবুক লাইভ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানিয়েছেন, কথা বলতে বলতে নিরন্তর চোখের জল ফেলেছেন আবু। চশমার কাচ বার বার ঝাপসা হয়েছে তাঁর। নিজের ব্যবসা ভাল ভাবে পরিচালনা না করতে পারার জন্য আফশোস করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অপরাগতার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ যে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, সে কথাও জানিয়েছেন। চূড়ান্ত হতাশা থেকেই যে আত্মহত্যা করতে চলেছেন মানুষটি তা লাইভের দর্শকেরা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছিলেন।

অনেকেই কমেন্ট করে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত হতে বলেন আবুকে। তাঁকে মানসিক ভাবে শান্ত করার চেষ্টাও করেন কেউ কেউ। দর্শকেরা জানিয়েছেন, আবুকে একসঙ্গে ছবি আঁকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এক চিত্রশিল্পী। তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য নিজেদের বাড়িতেও আসতে বলেন অনেকে। তবে ওইটুকুই। এর বেশি আর কিছু করা হয়নি তাঁকে বাঁচানোর জন্য। অনেক পরে পুলিশের কাছে ফোন যায়। পুলিশ লাইভ ভিডিয়ো দেখে আবুর বাড়ির ঠিকানা বুঝে সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। নেটাগরিকদের অনেকেই এখন এই দেরির কথা বলে আফসোস করছেন।

আবুর দর্শকরা জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে আবু বলেন, ‘‘আজ যাঁরা এই ভিডিয়ো দেখছেন, তাঁরা হয়তো এই শেষবার দেখছেন আমাকে। এই পৃথিবীর কোনও মানুষের প্রতি আর আমার ভালবাসা নেই। আমার আত্মীয়দের সঙ্গে যদি অন্যায় করে থাকি, তবে ক্ষমা করে দিও।’’ এরপর একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে দর্শকদের দেখান আবু। সেটি যে সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত সে কথাও জানান এবং মুহূর্তের মধ্যেই গুলিও চালিয়ে দেন।

শুক্রবারের ওই লাইভ ভিডিয়োটি ফেসবুক মুছে দিয়েছে। তবে ওই ভিডিয়োটি এখনও দেখা যাচ্ছে অনেকের ফেসবুক পেজে। বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনাও। তসলিমা নাসরিন, ঢাকার বিনোদন জগতের তারকা হিরো আলম এবং অনেকেই ওই আত্মহত্যা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ওই প্রৌঢ়ের স্ত্রী-সন্তানদের ভূমিকা নিয়েও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন