যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। —ফাইল চিত্র।
রাত হলেই হস্টেলের ‘দাদাদের’ ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় প্রথম বর্ষের আবাসিকদের। কার ডাক আসবে আজ? এই উদ্বেগ নিয়ে রাতের খাবার শেষ করতেন। কারণ, ‘ইন্ট্রো’র নামে তাঁদের সঙ্গে যা হয়, তা নিয়ে বলতে গিয়ে গলা কেঁপে যাচ্ছে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের আবাসিক। রবিবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে র্যাগিং নিয়ে নানা কথা ফাঁস করলেন ওই পড়ুয়া। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
ওই ছাত্র জানান, মৃত ছাত্রকে তিনি চিনতেন। তাঁর সঙ্গে এক বার রাতে হস্টেলের দাদাদের ডাকে তাঁকে ‘ইন্ট্রো’ দিতে যেতে হয়েছিল। সেখানে কী কী পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাঁদের, তা এক নিশ্বাসে বলে যান তিনি। ওই ছাত্রের অভিযোগ, মৃত পড়ুয়া বাংলা সাম্মানিক বিষয় নিয়ে পড়ছে শুনে ‘দাদারা’ তাঁকে বেশ কিছু অশ্লীল শব্দ বলেন। নির্দেশ আসে সেগুলোর ভাব সম্প্রসারণ করতে হবে। তাঁর সঙ্গেও তেমনটাই হয়েছে বলে জানান ওই ছাত্র। এক এক দিন প্রায় সারা রাত ধরে তাঁদের র্যাগিং করা হত বলে অভিযোগ করেন ওই আবাসিক।
ওই পড়ুয়া জানান, তাঁদের রাতে ডাক পড়ত হস্টেলের ৭৯ নম্বর ঘরে। সেখানেই জড়ো করে চলত ‘ইন্ট্রো’ নেওয়ার পর্ব। পরিচয় জানার নাম করে দুর্ব্যবহার করতেন হস্টেলের দাদারা। বস্তুত, এই ৭৯ নম্বর ঘরটি মেন হস্টেল বিল্ডিংয়ে। বুধবার রাতে যে বিল্ডিংয়ের তলায় পাওয়া যায় রক্তাক্ত ছাত্রকে। তখন তাঁর পরনে কোনও পোশাক ছিল না বলে দাবি। মৃত পড়ুয়ার ওই সহ-আবাসিক দাবি করেছেন, এক এক দিন রাত সাড়ে ৩টে পর্যন্ত দাদাদের কাছে নিজেদের পরিচয় দিতে হত। যাঁকে দাদারা বলেন, ‘ইন্ট্রো’। সেখানে নাম-ধাম, কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন, এ সব জানার পর চলত কটূক্তি। তা ছাড়া, দাদাদের ফাইফরমাশ খাটতে বাধ্য হতেন তাঁরা। ওই ছাত্র বলেন, ‘‘বাংলার ছাত্র হওয়ায় অশ্লীল শব্দের ভাবসম্প্রসারণ করতে বলা হয়েছিল ওকে (মৃত পড়ুয়াকে)। আমাদের ওরকম বলা হয়েছিল।’’ শুধু কী তাই! ওই ইন্ট্রো পর্বে বিভিন্ন কাজ দেওয়া হত। সেগুলোতে ব্যর্থ হলে বা কেউ করতে অস্বীকার করলে থাকত শাস্তি।
ওই পড়ুয়া জানান, শাস্তি হিসাবে তাঁদের দেওয়ালে শরীর ঘেষে হাঁটতে হত। কথায় কথায় হস্টেলের সিনিয়রদের অশ্লীল শব্দ এবং কটূক্তি শুনতেন তাঁরা। তাঁকেও এই ভাবে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ‘ইন্ট্রো’ দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘মূলত রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ হলেই ৭৯ নম্বর ঘরে যেতে হত। সেখানেই র্যাগিং হত।’’
প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নানা তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন অর্থাৎ, বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত সুস্থ এবং স্বাভাবিকই ছিলেন মৃত পড়ুয়া। এর পর মেন হস্টেলের একটি ঘরে তাঁর ডাক পড়ে। সেখানে ‘কাউন্সেলিং’ হয় তাঁর। যাদবপুরের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীও সেখানে হাজির ছিলেন।