প্রতীকী ছবি।
কাকদ্বীপে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের রাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক দম্পতির মৃত্যুর ঘটনায় সিপিএমেরই ৯ জন কর্মীকে গ্রেফতার করল সুন্দরবন পুলিশ। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয় তেলঙ্গানা থেকে। তাঁদের জেরা করে এ রাজ্য থেকে আরও সাত জনকে ধরা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সিপিএমের সক্রিয় কর্মী দেবু দাস (৫০) ও তাঁর স্ত্রী ঊষা দাসকে (৪২) ভোটের আগের রাতে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল সিপিএম। ঘটনার পরে বাড়ি ফেরার সময়ে দেবুবাবুর ছেলে দীপঙ্কর কয়েক জন দুষ্কৃতীকে পালিয়ে যেতে দেখেন বলে দাবি করেছিলেন। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা-সহ বেশ কয়েক জনের নামে পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করা হয়। কিন্তু এফআইআরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে তাদেরই সমর্থক ও নিরীহ গ্রামবাসীদের পুলিশ ‘মিথ্যা অভিযোগে’ ফাঁসাচ্ছে বলে পাল্টা সরব হয়েছে সিপিএম।
ঘটনার পরে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে শর্ট সার্কিটে আগুন লাগার তত্ত্ব সামনে আনা হয়েছিল। কিন্তু এখন রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ওই দম্পতিকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিদ্যুৎ হালদার এবং অমর সামন্ত নামে দু’জনকে প্রথমে তেলঙ্গানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই দু’জনকে জেরা করেই আরও সাত জন সিপিএম সমর্থককে ধরা হয়। সুন্দরবন জেলা পুলিশ কর্তাদের দাবি, ওই ঘটনায় ৯ জনই জড়িত এবং জেরায় তাঁরা খুনের কথা স্বীকারও করেছেন। তদন্তকারীদের বক্তব্য, স্বাধীনতার পর থেকে বুধাখালি পঞ্চায়েত কোনও দিন সিপিএমের হাতছাড়া হয়নি। এ বছর তা হাতছাড়া হতে চলেছে বলে অনুমান করেছিলেন বিদ্যুৎ। তার পরেই অমর-সহ বাকিদের নিয়ে দেবু ও ঊষাকে খুন করার চক্রান্ত করে বিদ্যুৎ। দেবুবাবুর এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল। তা ছাড়া, নদীর কাছে প্রায় নির্জন এলাকায় তাঁর বাড়ি। নির্বাচনের আগের দিন খুন হয়ে গেলে মানুষের ‘সহানুভুতি ভোট’ পাওয়া সহজ হবে ভেবেই এমন চক্রান্ত হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী অবশ্য পুলিশের বক্তব্য উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘এফআইআরে যাদের নাম ছিল, তাদের গ্রেফতার না করে অভিযুক্তদেরই পুলিশ এ দিন গাড়িতে করে গ্রামে নিয়ে যায়। ওই অভিযুক্তেরাই সিপিএম সমর্থক, নিরীহ মানুষদের বাড়ি চিনিয়ে দেওয়ার পরে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। যাঁদের এখন গ্রেফতার করা হল, তাঁরাই ১৩ মে রাতে দম্পতির দগ্ধ মৃতদেহ লোপাট করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।’’
রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, তেলঙ্গানা রাজ্য মেডাক জেলায় শ্যালকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিদ্যুৎ। প্রকৃতপক্ষে শনিবারই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে এ দিন কাকদ্বীপ আদালতে পেশ করা হয়। বাকিদের আজ, মঙ্গলবার আদালতে পেশ করা হবে। দেবুবাবুর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাসক দলের চাপে পুলিশ এফআইআরে যাদের নাম রয়েছে, তাদের ধরেনি। যারা ঘটনায় জড়িত নয়, তাদের গ্রেফতার করেছে।’’