ভোট-ম্যানেজার: প্রার্থী স্ত্রী গীতারানি। সবংয়ের বাড়ি থেকে তাই মোবাইলেই তদারকি মানস ভুঁইয়ার। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
জেলার একটি মাত্র কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন। নিরাপত্তা আয়োজনও নেহাত কম নয়। এসেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাও নির্বিঘ্ন হল না সবংয়ের অকাল ভোট। বিরোধী কর্মীরা মার খেলেন, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠল, এমনকী দিনের শেষে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করলেন তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়া।
মানসবাবুর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ এবং সাংসদ হওয়ায় শূন্য হয়েছিল সবং বিধানসভা আসন। তারই উপ-নির্বাচন ছিল বৃহস্পতিবার। ভোট পড়েছে ৮৪.৫ শতাংশ। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকারের দাবি, ‘‘শান্তিতেই মিটেছে ভোট।’’
দিনভর সবংয়ে চরকি পাকের অভিজ্ঞতা অবশ্য এই দাবির সঙ্গে মিলছে না। ভোটের আগের রাত থেকেই গোলমাল বাধে নানা এলাকায়। বিষ্ণুপুর, বলপাইয়ে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে অভিযোগে বুধবার রাতে কর্মীদের নিয়ে সবং থানায় যান বিজেপি প্রার্থী অন্তরা ভট্টাচার্য। বলপাইয়ের পেরুয়াতে তৃণমূলের বাইক বাহিনী টহল দিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন সিপিএম প্রার্থী রিতা মণ্ডল জানাও। ওই রাতেই বলপাইয়ের পানপাড়ায় তৃণমূল বুথ সভাপতি জয়ন্ত পাঁজার বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। তৃণমূল সূত্রে খবর, অমূল্য মাইতি ও মানস ভুঁইয়ার অনুগামীদের মধ্যে নতুন-পুরনো তৃণমূলের বিরোধেই এই হামলা। জয়ন্তরও বক্তব্য, “আমি অমূল্যবাবুর সঙ্গে থাকি। তবে ভোটে মানস ভুঁইয়ার জন্য খাটছিলাম। তাও মানস অনুগামী, কংগ্রেস থেকে আসা গৌর বেরার নেতৃত্বে বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।” যে তৃণমূল কর্মী খুনের মামলায় নাম জড়ানোর পরই মানসবাবু দলবদল করেন, সেই জয়দেব জানার স্ত্রী মানসীদেবী এ দিন ভোট দিয়েছেন।
ভোটের দিন সকালে সবংয়ের বেশিরভাগ বুথই ছিল ফাঁকা। তবে বেলা বাড়তেই সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠতে শুরু করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সার্তার সরিষা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে বিজেপি এজেন্ট প্রণব ধরকে ঢুকতে বাধা দেওয়া, শঙ্খডিহাতে বিজেপির বুথ সভাপতি ভীমপদ দাসকে মারধর, চাঁদকুড়িতে বিজেপি কর্মী বিভীষণ দাসকে মারধর করে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠুঁটো করে রাখার অভিযোগও তুলেছে বিজেপি। সবংয়ে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিন কলকাতায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এসপি এবং এসডিপিও থানায় বসে তৃণমূলের হয়ে ভোট করিয়েছেন।’’
আক্রান্ত সিপিএম-ও। বলপাইয়ের গোটগেড়িয়াতে দলীয় কর্মী চন্দন মাইতির মাথা ফাটানো, বুড়ালের গুণ্ডুত বুথে তিন সিপিএম কর্মীকে মারধর, ভেমুয়ায় ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে সিপিএম প্রার্থী রিতাদেবী বলেন, “বুথে বুথে গিয়ে প্রতিরোধ করেছি। তাই জয়ের আশাও রাখছি।’’
আরও পড়ুন: ডাহা ফেল ইডি-সিবিআই, মুখ পুড়ল মোদী সরকারের
তৃণমূল প্রার্থী, সহধর্মিনী গীতারানি ভুঁইয়ার জয় নিয়ে নিঃসংশয় মানসবাবুও। তবে খাসতালুকের ভোটেও এ দিন মেজাজ হারিয়েছেন সবংয়ের ভূমিপুত্র। ফোনে বিভিন্ন বুথের খোঁজ নিতে গিয়ে গলা তুলেছেন বারবার। সিপিএমের ছাপ্পা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ তৃণমূল সাংসদের। তিনি বলেন, “বিজেপি কোথায়! সিপিএমের সঙ্গে আমাদের কয়েকটি জায়গায় গোলমাল হয়েছে। সিপিএম ছাপ্পা দিতে চাওয়ায় বিষ্ণুপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে।’’ প্রশাসন গুলি চলার কথা মানেনি।