তানজানিয়া থেকে ফিরেও স্বস্তি মিলছে কই!

গত অক্টোবরে গ্রামেরই এজেন্ট ধরে আফ্রিকার তানজানিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন  হাঁসখালির পশ্চিম হরিণডাঙার আট জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাঁসখালি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০০
Share:

ভয়াবহ অভি়জ্ঞতা শোনাচ্ছেন শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

অবশেষে বাড়ি!

Advertisement

তানজানিয়ার জেলে জুটেছে এক বেলা আধপেটা খাবার। কোনও মতে ফিরতে পেরেছেন। বন্দিদশায় অসুস্থ হয়ে পড়েঠিলেন অনেকেই। তেমন চিকিৎসাও মেলেনি। এক সময়ে তো বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল।

শেষমেশ বাড়ি ফিরতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু স্বস্তি মিলছে কই? বিদেশে কাজে যাওয়ার জন্য তাঁরা প্রত্যেকে ধারদেনা করে এজেন্টের হাতে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে তুলে দিয়েছিলেন। বিদেশে গিয়ে কাজ তো মেলেইনি, উল্টে ঘরের টাকাই জলে গিয়েছে।

Advertisement

গত অক্টোবরে গ্রামেরই এজেন্ট ধরে আফ্রিকার তানজানিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন হাঁসখালির পশ্চিম হরিণডাঙার আট জন। সেখানে পৌঁছে জানতে পারেন তাঁদের কাগজপত্র, পারমিট সবই জাল। ঠাই হয় জেলে। তাঁদের দাবি, জেলে খাবার বলতে প্রাতরাশে দেওয়া হত এক ধরনের গাছের শিকড় পুড়িযে তৈরি তরল এক কাপ। দুপুরে দেওয়া হত সিদ্ধচাল গুঁড়ো করে জলে ভিজিয়ে পেয়ারার মাপের মণ্ড। দিনে একটিই। রাতে আর কিছু দেওয়া হত না। আর পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়ে দেওয়া হত সুজির মতো কিছু একটার মণ্ড। আর তার সঙ্গে বাদামের মতো কিছুর তরকারি। সে-ও দিনে এক বার। আট জনের এক জন সুব্রত মণ্ডল বলেন, “একবেলা যা খাবার দিত, তাতে পেট ভরত না। কী আর করব, তাই সহ্য করে থাকতে হয়েছে।”

সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুজিত মণ্ডলের মত কেউ কেউ। কিন্তু তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি। আধপেটা খেয়েও তাঁরা বাড়ির ফেরার আশা করে গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন বিদ্যুৎ বিশ্বাসও, যিনি এর আগেও বিদেশে গিয়েছেন। এ বছরের গোড়ার দিকেই কঙ্গো থেকে ফিরেছেন। সেখানে কোনও সমস্যা হয়নি। সুজিত ও তাঁর ভাই সুব্রত মণ্ডলও আগে বেশ কয়েক বার বিদেশে কাজ করে এসেছেন। তাঁরা সকলে ধার করেই যাওয়ার টাকা জোগাড় করেছিলেন। এখন কী ভাবে তা শোধ করবেন, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না। গাঁয়ের বাড়িতে বসে সুব্রত, বিদ্যুতেরা বলেন, “অন্য কোনও কাজ করে হলেও লোকের টাকা ফেরত দিতে হবে। যা ঘটল, তাতে আর ফের বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। কিন্তু সংসারই বা চলবে কী করে আর ধার বা কী করে শুধব!”

যতই ফাঁড়া গিয়ে থাক, বাধ্য হয়ে আবার হয়তো বিদেশের হাতছানিতে সাড়া দিতে হবে তাঁদের। ফের হয়তো পা বাড়াতে হবে অনিশ্চয়তার দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement