প্রতীকী ছবি
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি আজ, শনিবার সকাল থেকে শহরেও শুরু হচ্ছে করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি। দুপুরে নবান্ন থেকে ভিডিয়ো বৈঠকের মাধ্যমে সেই কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিনের এই কর্মযজ্ঞে শহরের সাত বিশিষ্ট চিকিৎসককে যুক্ত করেছে রাজ্য সরকার। তাঁরাও শহরের দু’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় নেবেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি এই তালিকায় রয়েছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়, আলোকগোপাল ঘোষাল, নাক-কান-গলার শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত, শল্য চিকিৎসক দীপক ঘোষ, চিকিৎসক অলোক রায়-সহ অন্যেরা। তালিকায় নাম রয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার সম্পাদক, চিকিৎসক তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনেরও। সূত্রের খবর, অরুণাভবাবু এসএসকেএম হাসপাতালে প্রতিষেধক নেবেন। বাকিরা প্রতিষেধক পাবেন এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। প্রত্যেককে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিষেধক-কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রের খ্যাতনামা প্রবীণ চিকিৎসক, করোনা-যোদ্ধা বা জয়ী এমন চিকিৎসকদেরই বাছাই করা হয়েছে প্রথম দিনের কর্মসূচিতে।’’ তিনি আরও জানান, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ছাড়াও ব্যক্তিগত চেম্বার করা চিকিৎসকদেরও প্রতিষেধক নেওয়ার তালিকায় যুক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিল আইএমএ। তাই সেই সংগঠনের সম্পাদককেও তালিকায় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, সাত জনের মধ্যে বেশির ভাগই প্রবীণ চিকিৎসক। প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ দুপুর ১টায় নবান্ন থেকে ভিডিয়ো বৈঠকের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিষেধক কেন্দ্রগুলি পর্যবেক্ষণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে থাকবেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
আরও পড়ুন: আজ সবাই প্রতিষেধক নিন, আর্জি কেন্দ্রের
সূত্রের খবর, সাত জন চিকিৎসকই দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে নির্দিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষেধক-কেন্দ্রে হাজির হয়ে কাগজপত্রের কাজ সম্পন্ন করে রাখবেন। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিয়ো বৈঠক চলাকালীনই তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়ার কথা। প্রয়োজনে ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে এবং রাজ্যের অন্যত্র প্রতিষেধক গ্রহীতাদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছরের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক অরুণাভবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আট মাসে অ্যান্টিবডি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফের আক্রান্ত হলে মৃত্যুমুখে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রস্তাব আসতেই রাজি হয়ে গিয়েছি। যাতে সুস্থ থেকে মানুষের সেবা করতে পারি।’’
যদিও করোনার এই প্রতিষেধকের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে কি না, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা কত দিন কার্যক্ষম থাকবে— সেই সব বিষয় এখনও সামনে আসেনি। তার আগেই কোভিশিল্ডকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের একাংশও ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধা বোধ করছেন।
আরও পড়ুন: গুজব ছড়ালে হবে নথিভুক্তি, টিকা-অস্ত্রে আজ শুরু নতুন লড়াই
এই পরিপ্রেক্ষিতে ধীমানবাবু মনে করছেন, দোলাচল কাটিয়ে চিকিৎসকদেরই প্রথম এগিয়ে আসা উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘আজ না হোক কাল তো নিতেই হবে। তবে শুরুতে দ্বিধা বোধ করলেও আমার বিশ্বাস, প্রবীণ ও নবীন চিকিৎসকেরা যখন সকলে প্রতিষেধক নেবেন, তা দেখে সাধারণ মানুষেরও ভয় কাটবে।’’ করোনার এই প্রতিষেধকের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল বলে দাবি শান্তনুবাবুরও।
আজ শহরের ২০টি কেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। তালিকায় রয়েছে এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল, বেলেঘাটা আইডি, এম আর বাঙুর হাসপাতাল ও বরো ২-এর অধীনে হাতিবাগানে আর্বান প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ইউপিএইচসি)-১১, বরো ৩-এর সিআইটি রোডের ইউপিএইচসি-৩১, বরো ৭-এর ডি সি দে রোডের ইউপিএইচসি-৫৭, বরো ৯-এর চেতলা সেন্ট্রাল রোডের ইউপিএইচসি-৮২, বরো ১১-এর বোড়াল মেন রোডের ইউপিএইচসি-১১১। এ ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল— ঢাকুরিয়া আমরি, রবীন্দ্রনাথ টেগোর, অ্যাপোলো, পিয়ারলেস ও টাটা মেডিক্যাল সেন্টার।