করোনা একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। ছবি: পিটিআই।
এ যেন ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’! এক দিকে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে, আর অন্য দিকে করোনা ‘ছোবলে’ একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। এই রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৬৪ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু অক্টোবরে মারা গিয়েছেন ১৫ জন। দুর্গাপুজোর সময় মৃত্যু হয়েছে ৫ জন চিকিৎসকের। কঠোর হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা না গেলে, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে চিকিৎসক মহলের একাংশ।
মহালয়ার দিন থেকে রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। কেরল-এর ‘ওনাম’ উৎসবের উদাহরণ দিয়ে বারবার সতর্ক করেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু পুজো নিয়ে উন্মাদনা কমেনি। ষষ্ঠীর দিন এক লাফে ৪ হাজারের ঘরে দৈনিক সংক্রমণ পৌঁছে যায়। ভিড় নিয়ন্ত্রণে কলকাতা হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। মণ্ডপে দর্শক প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও, রাস্তায় স্বাস্থ্য-বিধির তোয়াক্কা না করে দর্শকদের ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠার ছবিও ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, “এর খেসারত দিতে হবে এ বার স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁদের। কারণ, এখনও পর্যন্ত যে ৬৪ জন চিকিৎসকের তালিকা প্রস্তুত করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম, তাঁদের মধ্যে অনেকেই করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সংক্রমিত হয়েছিলেন। ফলে সংক্রমণ যদি ফের ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে, তা হলে চিকিৎসা পরিষেবায় সঙ্কট দেখা দিতে পারে।”
চিকিৎসক কৌশিক চাকি বলেন, “ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করে চলেছেন ডাক্তারবাবুরা। অনেকের প্রাণও যাচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার অভাব ধরা পড়ছে। উৎসবে মেতে থাকছেন। স্বাস্থ্য-বিধির তোয়াক্কা করছেন না। এক সঙ্গে অনেক মানুষ আক্রান্ত হলে, হাসপাতালে জায়গা পাওয়া যাবে তো? চিকিৎসার জন্য ডাক্তার মিলবে তো?”
১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ওই সময় রাজ্যে দৈনিক সংক্রমিত হন ৩১৯৭জন। তার আগে ২ থেকে আড়াই হাজারের মধ্যেই ছিল দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা। প্রথম ৪ হাজার ঘর ছুঁয়ে ছিল ২০ অক্টোবর, চতুর্থীর দিন। ২২ অক্টোবর, ষষ্ঠীর দিনে ৪১৫৭ জন আক্রান্ত হন। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন। শুধু মাত্র অক্টোবর মাসেই ১৫ জন চিকিৎসক মারা গিয়েছেন। পুজোর সময় পাঁচ চিকিৎসকের (দিলীপ ভট্টাচার্য, সুজনকুমার মিত্র, অমল রায়, শৈবাল দাশগুপ্ত, দিলীপকুমার বিশ্বাস) মৃত্যুতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
এই তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ হয়ে চলেছে। সেই তালিকা স্বাস্থ্য ভবনের হাতে তুলে দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। সংগঠনের তরফে চিকিৎসক রাজীব পান্ডে বলেন, “আমার সব সময়ই সতর্ক করে আসছি। পুজোর সময় পাঁচজন ডাক্তার মারা গিয়েছেন। আগামী দিনে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত আমরা। মানুষকে আরও সতর্ক হতে হবে। প্রশাসনকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।”
আরও পড়ুন: গভীর সঙ্কটে সৌমিত্র, দেওয়া হল ভেন্টিলেশনে
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে না, অভিনেত্রীকে কোপ যুবকের, অডি-তে চেপে ঘটনাস্থল থেকে ফেরার
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “চিন্তার বিষয় তো বটেই। এ রাজ্য দৈনিক সংক্রমণের হার বাড়ছে। আমার সাত-আট মাস ধরে লড়াই করে ক্লান্ত। মানুষ যদি সচেতন না হন, স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তো থাকছেই। সরকারকেও আরও কঠোর হতে হবে।” যদিও রাজ্য সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগের থেকে অনেক বেশি পরীক্ষা হচ্ছে দৈনিক। হাসপাতালে বেডের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।”