মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —প্রতীকী ছবি।
বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় দুর্গতদের জন্য আর্থিক সাহায্য ঘোষণা আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নবান্নে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে বিশদ জানালেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে, এই দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে মারা গিয়েছেন ৬২ জন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই অনুমান করেছেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আমাদের রাজ্য থেকে মারা গিয়েছেন ৬২ জন। আমরা তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেব। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেব। গুরুতর আহতদের দেওয়া হবে ১ লক্ষ টাকা করে। অল্প আহতদের ২৫ হাজার করে দেওয়া হবে। আগামী ৩ মাস তাদের রক্ষণাবেক্ষণের ভারও নেবে সরকার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনায় যাঁরা আহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের যেমন রাজ্য সরকার পাশে থাকবে। তেমনই যাঁরা এই ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন, তাঁরা এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মানসিক অবস্থা ভাল নেই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই সরকার আগামী ৩ মাস তাঁদের পাশে থেকে সাহায্য করবে। আপাতত তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তারপর ৩ মাস তাঁদের ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সঙ্গে সরকারের তরফে সাহায্য বাবদ চাল, ডাল ইত্যাদি জিনিস তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ পাশাপাশি, যাঁরা কাজ চাইবেন, তাঁদের প্রয়োজনে ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মমতা। তবে কেন নিহতদের পরিবারকে কেন্দ্রীয় সরকার চাকরি দিল না তা নিয়েও বিস্ময়প্রকাশ করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মেদিনীপুরের এডিএম-সহ বেশ কিছু আধিকারিক দুর্ঘটনার দিন থেকেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আহতদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে ১৫০টি অ্যাম্বুল্যান্স, ৫০ জন ডাক্তার, নার্স, যা যা প্রয়োজন পাঠানো হয়েছে। মমতার কথায়, ‘‘কেন্দ্র বড় বড় কথা বলে, কাজ করে রাজ্য। ওড়িশা সরকারের সঙ্গে কথা বলে আমরা কাজ করেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমাদের হাতে আসেনি। ৬১ জন মারা গিয়েছে বাংলার। ২০৬ জনকে এনে বাংলার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ৭৩ জনকে ওড়িশার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ৫৬ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের চেনা যাচ্ছে না এমন ১৮২ জনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের প্রশাসন সবসময় কাজে মোতায়েন রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘আমরা মৃতদের যে তালিকা প্রকাশ করেছি পুরো অথেন্টিক। সাঁতরাগাছি, নবান্ন, খড়্গপুরে আমাদের কন্ট্রোল রুম কাজ করছে। ওড়িশা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে খড়্গপুর ও মেদিনীপুরে আধিকারিকরা কর্মরত রয়েছেন। কথা বলে আহতদের বাড়িতে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বাস চালিয়ে ৭০০-৮০০ জনকে বাড়ি ফিরিয়েছি।’’
শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই বালেশ্বর গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গয়াল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশও ১৩ হাজার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আহতদের বাড়ি ফেরানোর কাজে হাত লাগিয়েছে।