কামরা-দখল: অভিযোগ জানিয়ে রেলমন্ত্রককে টুইট সুশোভনবাবুর। নিজস্ব চিত্র
খবরের কাগজ পেতে রোজই তাঁরা রানাঘাট লোকালে পাঁচ জনে পনেরো জনের জায়গা রাখেন। জায়গা ছাড়তে বললে জবাব আসে— এটাই নিয়ম!
সে দিনও তা-ই বলেছিলেন ট্রেন ধরতে আসা এক ডাক্তারবাবুকে। তিনি যে সটান রেল মন্ত্রককে টুইট করে বসবেন, তা বোধহয় তাঁরা ঠাহর করতে পারেননি। আর তার জেরে যে শনিবার পাঁচ জনকে শ্রীঘরে যেতে হতে পারে, তা তো কল্পনারও অতীত! পরে তাঁরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন বটে, কিন্তু সে তো পরের কথা।
গত শুক্রবার রানাঘাট থেকে কলকাতায় ফিরবেন বলে সকাল সাড়ে ৭টার লোকাল ধরেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের আয়ুর্বেদ ইনটার্ন সুশোভন পাল। উঠে দেখেন, গোটা কামরায় ছ’সাত জন বসে আছেন। কিন্তু বাদ বাকি সব আসনই জলের বোতল, খবরের কাগজ, ছাতা রেখে দখল করা! তিনি একটি কাগজ সরিয়ে বসতে গেলে রে-রে করে ওঠেন কামরায় থাকা বাকিরা।
সুশোভনের অভিযোগ, ‘‘ওঁরা নিত্যযাত্রী। একজোট হয়ে চড়া গলায় ওঁরা আমায় আসন ছাড়তে বলেন এবং না উঠলে যে কপালে অশেষ দুঃখ আছে, সেটাও জানিয়ে দেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, রানাঘাট স্টেশন থেকে ট্রেন যখন ছাড়ে, তখনও বহু আসন খালি পড়ে। অথচ যাঁরা নিত্যযাত্রী নন, তাঁদের দাঁড়িয়েই থাকতে হয়। সুশোভন বলেন, ‘‘এর পরে একটা করে স্টেশন আসে আর কিছু লোক উঠে দখল করে রাখা জায়গায় বসতে থাকে। চাকদহ পর্যন্ত এ-ই চলে।’’
বিরক্ত হয়ে সুশোভন ট্রেন থেকেই রেল মন্ত্রককে টুইট করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। উত্তর পাবেন, এমন আশা যদিও করেননি। ঘণ্টা তিনেক বাদে রেল মন্ত্রক থেকে টুইট করে রেল রক্ষী বাহিনীকে (আরপিএফ) বিষয়টি দেখতে বলা হয়। সন্ধ্যায় আরপিএফ টুইট করে তাঁর ঠিকানা ও ফোন নম্বর চায়। তার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাটি শোনে।
হাতেনাতে ফল হয় শনিবার।
সকাল ৬টা নাগাদ শিয়ালদহ আরপিএফ সুশোভনকে ফোন করে জানায় যে তাদের আট জনের একটি দল নিত্যযাত্রীদের গা-জোয়ারি ধরতে অভিযানে যাচ্ছে। ফের পৌনে ৮টা নাগাদ রানাঘাট আরপিএফ থেকে ফোন করে জানানো হয়, জুলুমবাজি করে আসন ধরে রাখার অভিযোগে পাঁচ জনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।
আরপিএফের রানাঘাট পোস্টের ইনস্পেক্টর অসীম দাস বলেন, “সুশোভনবাবুর টুইট পেয়ে রেলমন্ত্রক আমাদের জানায়। তার পরেই অভিযান চলে।’’ সুশোভন বলেন, ‘‘খবরের কাগজ, রুমাল, বোতল, ব্যাগ, চশমা দিয়ে ট্রেনে বসার জায়গা আটকানো দীর্ঘদিন ধরে চলছে। রেল মন্ত্রক যে দ্রুততায় ব্যবস্থা নিল, তাতে আমার মতো যাত্রীরা আশ্বস্ত হবেন।’’