বুধবার দমদম সেন্ট্রাল জেলের অদূরে যশোর রোডের মোড়ে ওই কামানটিকে মাটির উপরে তোলা হয়। — নিজস্ব চিত্র।
প্রায় আড়াইশো বছর ধরে অযত্নে পড়ে ছিল মাটিতে আধ-পোঁতা হয়ে। ১৫ দিনের চেষ্টায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জমানার সেই কামানকে খুঁড়ে বার করা হল। সৌজন্যে দমদম পুরসভা, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং সিইএসসি। বুধবার দমদম সেন্ট্রাল জেলের অদূরে যশোর রোডের মোড়ে ওই কামানটিকে মাটির উপরে তোলা হয়। এর পর আনা হয় নিউ সেক্রেটারিয়েটে। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ বিপ্লব রায়।
বিপ্লব জানান, ১০ ফুট ৮ ইঞ্চি দীর্ঘ কামানটির প্রায় ১ ফুট মাটির উপরে ছিল। বাকি অংশ মাটির তলায়। কামান বিশেষজ্ঞ অমিতাভ কানুন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের সহযোগিতায় সেটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটিশদের তৈরি কামানটির নকশা করা হয়েছিল ১৭৬৩ সালে। ধরা যেতে পারে ১৭৭০ সালে কামানটি তৈরি করা হয়েছিল।’’ ৬ টন (৬ হাজার কিলোগ্রাম) ওজনের ওই কামানটি ১৮ কিলোগ্রাম ওজনের গোলা ১,২০০ থেকে ১,৫০০ গজ দূরে ছুড়তে সক্ষম ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে দমদমের ঐতিহাসিক ক্লাইভ হাউস প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান কামানটি যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরবর্তী কালে সম্ভবত যশোর রোড থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেলে ঢোকার প্রবেশ দ্বারে সেটি রাখা ছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, কামানের মুখের দিকের অংশ মাটির বাইরে বেরিয়ে থাকায় অনেকেই সেটি জঞ্জাল ফেলার জন্য ব্যবহার করতেন। মাটির তলায় কামানটিকে ঘিরে ছিল নানা কেবলে্র তার। তাই সাবধানে খননকার্য চালাতে হয়েছে। ফিরহাদ বুধবার বলেন, ‘‘যেহেতু এই সম্পত্তি আদালতের তাই আদালত যেমন চাইবে তা মেনে আলিপুরে বা অন্যান্য জায়গায় সেগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, সত্তরের দশকে টালিগঞ্জ-দমদম মেট্রো রেলের জন্য খনন কার্যের সময়েও মাটির নীচ থেকে কয়েকটি প্রাচীন কামান মিলেছিল। তবে এই প্রথম বার এ ভাবে কোনও প্রাচীন তোপ মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হল। বিপ্লব বলেন, ‘‘এটা আমাদের কলকাতার ঐতিহ্য। আমাদের রাজ্যের মুকুটে একটা পালক লাগল। এই প্রথম এমন একটা হেরিটেজ আমরা মাটি খুঁড়ে বার করলাম। কলকাতায় এ রকম অনেকগুলি কামান আছে। আমরা চেষ্টা করছি সেগুলি একে একে উদ্ধার করার।’’