ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন এ বার দিল্লিতে। ফাইল চিত্র।
এ বার পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবি নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন রাজধানী দিল্লিতে। সব ঠিকঠাক চললে আগামী ১০-১১ এপ্রিল দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সেখানে গিয়ে কেবল ধর্না দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তারা। ওই দু’দিন দিল্লিতে থেকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ডেপুটেশন দেবেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন তাঁরা। সেই দাবির সপক্ষে যুক্তি দেশের রাষ্ট্রপতি-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের হাতে তুলে দেবেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীরা তাঁদের জন্য সময় বরাদ্দ করেছেন বলেই সূত্রের খবর। মোট ৫০০ জন সরকারি কর্মচারী এই ধর্না কর্মসূচিতে যোগ দিতে দিল্লিতে যাচ্ছেন। ৮ তারিখে ২০০ জন ও ৯ তারিখে ৩০০ সরকারি কর্মচারী ট্রেনে চেপে দিল্লি রওনা হবেন। ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘটের পর দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তাঁরা দিল্লি গিয়ে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরবেন। ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলছেই।
গত বছর থেকে ডিএ-র দাবিতে চড়া সুরে তাঁরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে তাঁদের। বর্তমানে ৬ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, প্রাপ্য আরও ৩৬ শতাংশ ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজেদের দাবিতে অনড়। প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনের দিন মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো চিরকুট পড়ে ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই ঘোষণার পর ২৪ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী, সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার অনুমোদিত স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, পঞ্চায়েত কর্মী, পুরসভা, পুরনিগম এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার। ১ মার্চ থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন কর্মীরা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ শতাংশ হারে ডিএ বাড়িয়েছিল মমতার সরকার। এ বারের বাজেটে আরও ৩ শতাংশ যুক্ত হয়েছে। তাই মার্চ মাস থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।
২৪ ফেব্রুয়ারির বিজ্ঞপ্তির পরেও ক্ষোভ কমেনি রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের। ৬ শতাংশ হারে ডিএ-তে খুশি নন সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র। তাই এ বার সেই দাবিতে দিল্লি যাচ্ছেন তাঁরা। ডিএ-র দাবিতে গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে দু’দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মীরা। ডিএ-র দাবিতে আগামী ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘট পালন করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, শহিদ মিনারে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ধারাবাহিক ভাবে ডিএ-র দাবিতে ধর্না দিয়েছেন।
সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৪২ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) পাবেন চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। তাই চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৩৮ শতাংশের বদলে ৪২ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন। আর এই ঘটনায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে। অন্য দিকে, গত ৩০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডের ধর্না কর্মসূচি থেকে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের ‘চোর-ডাকাত’ বলে আক্রমণ করেছেন। তার জবাবে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ ও রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি যৌথ ভাবে ফের বৃহস্পতিবার ৬ এপ্রিল কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।