যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের দাবিতে রেল অবরোধে হয়রান যাত্রীরাই

যাত্রী পরিষেবার মানোন্নয়নের দাবিতে মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্টেশনে এক ঘণ্টা রেল অবরোধ করল এসইউসি। সকাল ১০টা থেকে অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “এ দিন অবরোধের ফলে আপ শিয়ালদহ লাইনে তিনটি এবং ডাউন শিয়ালদহ লাইনে চারটি ট্রেন প্রায় ৩৫ মিনিট করে দেরিতে চলেছে।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

ক্যানিং স্টেশনে তখন চলছে অবরোধ। ছবি: সামসুল হুদা।

যাত্রী পরিষেবার মানোন্নয়নের দাবিতে মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্টেশনে এক ঘণ্টা রেল অবরোধ করল এসইউসি। সকাল ১০টা থেকে অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “এ দিন অবরোধের ফলে আপ শিয়ালদহ লাইনে তিনটি এবং ডাউন শিয়ালদহ লাইনে চারটি ট্রেন প্রায় ৩৫ মিনিট করে দেরিতে চলেছে।”

Advertisement

এ দিনের কর্মসূচিকে দলের পক্ষ থেকে ‘প্রতীকী অবরোধ’ বলা হয়েছে। এসইউসি-র দাবি, অফিস টাইমে আধ ঘণ্টা অন্তর ট্রেন চালাতে হবে। জয়নগর, দক্ষিণ বারাসত ও ঘুটিয়ারিশরিফ থেকে লোকাল ট্রেন চালু করতে হবে। ক্যানিং লাইনে চাঁদখালি হল্ট স্টেশন চালু করা নিয়েও তাঁরা দাবি তোলেন। এ দিনের কর্মসূচিতে ক্যানিং থেকে ভাঙনখালি পর্যন্ত অসমাপ্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজ শেষ করার প্রসঙ্গ ওঠে। ওই লাইন গোসাবার গদখালি এবং বাসন্তীর ঝড়খালি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার কথাও বলেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া তালদি, জীবনতলা, ভোজেরহাট হয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত নতুন রুট তৈরির দাবি তোলা হয়। স্টেশনের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া, উচ্ছেদ করলেও তাঁদের পুনর্বাসনের দাবিতে সোচ্চার হন এসইউসি কর্মী-সমর্থকেরা। স্টেশনে টিকিট কাউন্টার বাড়ানো, যাত্রীদের জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচালয় গড়া-সহ যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তাঁরা। একই সময়ে শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখায় মগরাহাট এবং ডায়মন্ড হারবার স্টেশন অবরোধ হয়। শিয়ালদহ-নামখানা শাখার বহুরু, লক্ষ্মীকান্তপুর, গোচরণ, কাকদ্বীপ স্টেশনগুলিতে অবরোধ চলে। এসএউসিআই-র জেলা কমিটির সদস্য তথা জয়নগরের বিধায়ক তরুণ নস্কর বলেন, “যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য আমরা জেলা জুড়ে গণস্বাক্ষর নেওয়া শুরু করেছি। কয়েক লক্ষ স্বাক্ষর নিয়ে আমরা দাবিগুলি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে জানাব।”

নিত্যযাত্রী শিউলি রায় অবশ্য বলেন, “কালও ট্রেন অবরোধ ছিল। আজ হল। এ ভাবে নিয়মিত যাতায়াত বন্ধ করে আন্দোলন করে কি আদৌ কোনও দাবি আদায় হয়? সমস্যাগুলি নিয়ে সরকারের নিজে থেকেই উদ্যোগী হওয়া উচিত।” সুন্দরবন বেড়িয়ে ফিরছিলেন অনিন্দিতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ক্যানিং স্টেশনের পরিকাঠামোগত অনেক সমস্যা রয়েছে। সেই দাবিতে অবরোধকারীদের আন্দোলন যদি সফল হয়, তা হলে পর্যটকদের সুবিধা হয়। সরকারেরও এ বিষয়ে ভাবা উচিত।”

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনা এসইউসি-র দীর্ঘ দিনের শক্ত ঘাঁটি। রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় এক সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তাদের ক্ষমতা আরও বেড়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় এসইউসি-র। ইদানীং সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষে এসইউসি-র সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। এ দিকে, এ রাজ্যে নানা ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে কোণঠাসা হচ্ছে শাসক দল তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে এ দিনের কর্মসূচিকে সামনে রেখে এসইউসি নিজেদের ঘর গুছাতে চাইছে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।

দলের প্রাক্তন সাংসদ তরুণ মণ্ডল বলেন, “লড়াই আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই মানুষের সার্বিক উন্নতি সাধন সম্ভব। শুধু রেল নয়, মানুষের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য সমস্ত বিষয়েই আমরা আন্দোলন করছি। যে আন্দোলনের মাধ্যমে বামপন্থীরা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তা থেকে তাঁরা সরে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের সঠিক উন্নতি হচ্ছে না। দাবি পূরণ না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

এ দিনই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বনগাঁ স্টেশনে এক ঘণ্টার জন্য রেল অবরোধ করেন রেলের চাকুরিপ্রার্থী কিছু যুবক। গত ২ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের পরীক্ষা ছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা বাতিল হয়। আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে এ দিন পরীক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি করেন, রেলের কর্তারা জড়িত না থাকলে প্রশ্নপত্র বাইরে বেরোত না। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করেও শাস্তিরও দাবি করেন তাঁরা। জিআরপি ও আরপিএফ অফিসারেরা ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement