একলাখির পরে বাগনান।
এক পুরুষ টিকিট পরীক্ষকের (টিটিই) বিরুদ্ধে মহিলা যাত্রীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে শুক্রবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মালদহের গাজল থানার একলাখি স্টেশন। ২৪ ঘণ্টা পরে, শনিবার একই ধরনের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার বাগনান স্টেশন। তবে এ বার অভিযুক্ত টিকিট পরীক্ষক মহিলা। তিনি-সহ পাঁচ টিটিই মার খান। দফায় দফায় ট্রেন অবরোধ করা হয়। পাথর ছুড়ে ভাঙচুর চালানো হয় হাওড়াগামী সত্যসাঁই এক্সপ্রেসে।
পাঁশকুড়ার বাহারপোঁতার বাসিন্দা, অর্পিতা সামন্ত নামে আহত ওই যাত্রীকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর মাথায় গভীর ক্ষত হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। অভিযুক্ত মহিলা টিকিট পরীক্ষক রঞ্জিত কৌরের দাবি, “ওই মহিলার কাছে টিকিট ছিল না। তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ঠিকই। কিন্তু আমি ওঁকে ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলিনি। উনি নিজেই লাফিয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে যান।” একই দাবি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদারেরও।
স্বামীর সঙ্গে সকালে এসএসকেএমে এসেছিলেন অর্পিতা। স্বামীর কাজ থাকায় সাঁতরাগাছি থেকে মেদিনীপুর লোকাল ধরে একাই ফিরছিলেন মহিলা। নামার কথা ছিল ভোগপুর স্টেশনে। উঠেছিলেন মহিলা-কামরায়। সওয়া ১টা নাগাদ ট্রেনটি যখন গতি কমিয়ে বাগনান স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে, তখনই অর্পিতাকে কামরা থেকে পড়ে যেতে দেখেন যাত্রীরা।
স্টেশনে থাকা যাত্রীদের একাংশ ওই ট্রেনের মহিলা টিকিট পরীক্ষক রঞ্জিত কৌরের বিরুদ্ধে অর্পিতাকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। রঞ্জিতকে ঘিরে ধরে শুরু হয় মার। রঞ্জিত কোনও মতে নিজেকে ছাড়িয়ে স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের দিকে দৌড়ন। রেল পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। তত ক্ষণে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এম এ হামিদ নামে আর এক টিকিট পরীক্ষককেও হেনস্থা করা হয়। তাঁকেও রেল পুলিশ উদ্ধার করে।
এর পরে দফায় দফায় ওই স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করা হয়। আড়াইটেয় বাগনানে ঢোকে হাওড়াগামী সত্যসাঁই এক্সপ্রেস। অবরোধকাকারীদের ছোড়া পাথরে ট্রেনটির একটি বাতানুকুল কামরার কয়েকটি কাচ ভাঙে। ওই ট্রেন থেকেও দুই মহিলা এবং এক পুরুষ টিকিট পরীক্ষককে নামিয়ে জনতা বেধড়ক মারে। তখন সেখানে রেল পুলিশ পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল না। ফলে, তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরে আরপিএফের বিশাল বাহিনী আসে। রেল পুলিশ রঞ্জিত কৌরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে সাড়ে ৩টে নাগাদ অবরোধ ওঠে।
দুপুরে হাসপাতালে প্রায় অচৈতন্য অবস্থাতেই ছিলেন অর্পিতা। তাঁর স্বামী পবিত্র সামন্তর দাবি, কলকাতা আসার সময়ে স্ত্রী-র জন্য ‘রিটার্ন টিকিট’ কেটেছিলেন। যদিও তা দেখে নেননি। ফেরার সময়ে স্ত্রী তাঁকে ফোনে জানান, তাঁকে টিটিই আটকেছেন। পবিত্র বলেন, “টিটিই-র সঙ্গে কথা বলে জানলাম, স্ত্রীর কাছে ‘সিঙ্গল’ (এক দিকে যাত্রার) টিকিট রয়েছে। যা বৈধ নয়। বাগনান স্টেশনে স্ত্রীকে নিয়ে টিটিইকে নামতে বলেছিলাম। সেখানে আমার লোক জরিমানা দিয়ে দিত। কিন্তু এই কাণ্ড হল!” রাত পর্যন্ত অর্পিতা বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে রেল পুলিশের কাছে রঞ্জিত কাউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
একলাখি স্টেশনের ঘটনায় অভিযুক্ত টিকিট পরীক্ষক রোহনকুমার রামের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার সময়ে রোহন বইফুল বিবি নামে ওই যাত্রী ও তাঁর মেয়ের টিকিট পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন। আহত বইফুল বিবি এসএসকেএমে ভর্তি। তাঁর স্বামী এশাহক আলি বলেন, “স্ত্রী কথা বলতে পারছে না।”