মজুত করা হচ্ছে আবির। নিজস্ব চিত্র।
শারদ উৎসবের মুখে যেন হোলির প্রস্তুতি চলছে বসিরহাটে।
আজ, মঙ্গলবার বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ভোট গণনা। সকাল ৮টা থেকে বসিরহাট হাইস্কুলে ভোট গণনার কাজ শুরু হবে। আর যে দলই জিতুক না কেন, আবির খেলা তো হবেই। তাই আবির আর রঙ বিক্রিতে মন দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবুজ আবিরের চাহিদা বেশি থাকতে পারে, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলের একাংশ। তবে গেরুয়া আবিরের আয়োজনও সাজিয়ে রেখেছেন তাঁরা। কমবেশি লাল-গোলাপি আবিরও তুলেছেন কেউ কেউ।
বসিরহাট পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী দেবু দত্ত, অতনু হালদার জানালেন, গেরুয়া রঙের আবির সব সময়ে মেলে না। তাই স্টক রাখতে হচ্ছে। তৃণমূল-বিজেপি যেই জিতুক না কেন, সবুজ রঙের আবির কেনার দিকে পাল্লা ভারি। তা হলে কী কংগ্রেস-সিপিএমের জয়ের সম্ভাবনা কম? ব্যবসায়ীরা এক গাল হেসে বললেন, “এ সব আর আমরা কী করে বলব! আমাদের ব্যবসা ভাল হলেই হল।”
কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ভালয় ভালয় মিটেছে ভোটপর্ব। গণনার পরে যে দলই জিতুক না কেন, আইন-শৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। বসিরহাট হাইস্কুল ঘিরে এখন টানটান নিরাপত্তা। সে সব গলে মাছিটুকু গলার জো নেই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বসিরহাট হাইস্কুলের দোতলার ঘরে রাখা হয়েছে ২৮৫টি বুথের ইভিএম। ২৬টি টেবিলে গণনা হবে। প্রতি টেবিলে একজন করে মাইক্রো অবজারভার থাকবেন। ১১ রাউন্ড গণনার শেষে ফল ঘোষণা হতে বেলা সাড়ে ১২টা বেজে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের দীপেন্দু বিশ্বাস, বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের অসিত মজুমদার, সিপিএমের মৃণাল চক্রবর্তীরা সকলেই মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, “এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বড় একটা দেখা যায়নি। জয়ের ব্যাপারে যে যার মতো আত্মবিশ্বাসী।
ভোটের আগে নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা, ফুটবলার, জাদুকর কে না এসেছেন ভোটের প্রচারে। দিনভর পথে পথে তারস্বরে মাইক বেজেছে। কখনও ব্যান্ডপাটি, কখনও ঢাক-ঢোল-তাসা নিয়ে প্রচার দেখা গিয়েছে। রোড-শো ঘিরে একেক সময়ে নাগরিকদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। লম্বা লম্বা কাটআউট, পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিংয়ে ঢেকে গিয়েছিল বসিরহাট-হাসনাবাদ-টাকির অলিগলি। বহিরাগতদের ভিড় চাপা উত্তেজনা তৈরি করেছিল। কিন্তু ভোটের দিন সেই আশঙ্কা অবশ্য সত্যি হয়নি।
ফল ঘোষণার আগের দিন, সোমবার তৃণমূলের ফুটবলার-প্রার্থী দীপেন্দু বলেন, “লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে মাঝ মাঠ থেকে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাটিয়ে গোল করা এক রকম। আর ভোটের জন্য বাড়ি বাড়ি যাওয়া অন্য রকম অভিজ্ঞতা। বেশ কিছুটা সময় ধরে দিন-রাত এক করে যে ভাবে মানুষের দরজায় পৌঁছে তাদের ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। তাই টেনশন করার কারণ নেই। আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজের শরিক হয়ে বসিরহাটের রাস্তা, পানীয় জল, নিকাশি-সহ নানা উন্নয়নের কাজে এখানকার মানুষ আমাকেই সমর্থন করবেন।” বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “বসিরহাটের রাস্তা দেখলেই বোঝা যাবে, গত সাড়ে তিন বছরে এখানে উন্নয়নের কী হাল! আমার বিশ্বাস, যে ভাবে এখানকার মানুষ গত লোকসভা ভোটে আমাকে সমর্থন করেছিলেন, বিধানসভা উপনির্বাচনেও তা করবেন। সিপিএমের মৃণাল চক্রবর্তী কিংবা কংগ্রেসের অসিত মজুমদারের কথায়, “মানুষ যদি সঠিক ভাবে তাঁদের ভোটটা দিতে পেরে থাকেন, তা হলে জয় নিয়ে চিন্তিত নই। তবে তেমনটা যে হয়েছে, এখুনি বলা সম্ভব নয়। কারন ভোটের দিন বড় কোনও হাঙ্গামা না হলেও আগে থেকে বহিরাগতদের এনে চমকানো-ধমকানোর মতো ঘটনার কথা তো সকলেরই জানা।”
বসিরহাটের মানুষের আশা-স্বপ্নের হিসাব জানতে অপেক্ষা আর কয়েকটা ঘণ্টার মাত্র।
আজ ফল বসিরহাট দক্ষিণে
• বসিরহাট হাইস্কুলের দোতলার ঘরে রাখা হয়েছে ২৮৫টি বুথের ইভিএম।
• ২৬টি টেবিলে গণনা হবে।
• প্রতি টেবিলে এক জন করে মাইক্রো অবজারভার থাকবেন।
• ১১ রাউন্ড গণনার শেষে ফল ঘোষণা হতে বেলা সাড়ে ১২টা বেজে যাবে বলে অনুমান।