ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ঘড়িতে সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিট। সবেমাত্র ডাউন ক্যানিং লোকাল প্ল্যাটফর্মে ঢুকেছে। ট্রেন থেকে নেমেই যাত্রীরা ছুটছেন বাসস্ট্যান্ডের দিকে। বিভিন্ন রুটে যাত্রী তোলার জন্য হাঁকাহাঁকি চলছে বাস কন্ডাক্টর, ম্যাজিক, অটো, ট্রেকার চালকদের। তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়ায় যাত্রীরাও ঠাসাঠাসি করে উঠে পড়ছেন ওই সব গাড়িতে। ভিতরে জায়গা না থাকলে উঠে পড়ছেন গাড়ির ছাদে। যাত্রী নিরাপত্তার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোজ এ ভাবেই যাত্রী পরিবহণ চলছে ক্যানিংয়ে। কম সংখ্যায় যানবাহন এবং দ্রুত কাজের জায়গায় পৌঁছনোর তাগিদে বাধ্য হয়ে যাত্রীরাও তাতে সামিল হচ্ছেন।
ক্যানিং-গোলাবাড়ি রুটের একটি ম্যাজিক গাড়ির ভিতরে বসার জায়গা খুঁজছিলেন জনৈক সরকারি কর্মী। হটাৎই চিৎকার চালকের, ‘এখানে হবে না, ছাদে উঠে পড়ুন’। তারপরেও অনায়াসে গাড়িতে যাত্রী তুলছিলেন ওই চালক। এ ভাবে গাড়ির মাথায় উঠতে গিয়ে পড়ে গেলেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। এটাই নিত্যদিনের ছবি দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম মহকুমা শহর ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডের।
ক্যানিং-বারুইপুর, ক্যানিং-গোলাবাড়ি-জামতলা, ক্যানিং-বাসন্তী-ঝড়খালি, ক্যানিং-বাসন্তী-গদখালি, ক্যানিং-চুনাখানি রুটের বাস, ট্রেকার, ম্যাজিক, অটো দিনের পর দিন এমন বেআইনি ভাবে যাত্রী পরিবহণ করলেও প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়ে না। একটি ম্যাজিক গাড়ি বা ট্রেকারে ১২ থেকে ১৪ জন যাত্রী তোলার কথা থাকলেও তোলা হয় ৪০ থেকে ৫০ জন। গাড়ির ছাদে পা রাখার পর্যন্ত জায়গা থাকে না। প্রতিপদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ভাবেই যাতায়াত করতে হয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে নিত্য যাত্রীদের। যাত্রীদের অভিযোগ, যাঁদের প্রশাসনের নজরদারি করার কথা তাকলেও তাঁরাই সে ব্যাপারে উদাসীন। তাই মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটলেও এটাকে ভবিতব্য বলেই মেনে নিয়েছেন তাঁরা। মাস পাঁচেক আগেও ক্যানিং-জামতলা রুটে বাসের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় এক ছাত্রের। দু’সপ্তাহ আগে বাসন্তীতে অটোয় অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণে দুঘর্র্টনায় মৃত্যু হয় ৩ জনের। কিন্তু তার পরেও টনক নড়েনি পুলিশ-প্রশাসনের।
ক্যানিংগোলাবাড়ির রুটের নিত্যযাত্রী প্রশান্ত পাল, অনিতা রায় বলেন, “একে অফিসের তাড়া থাকে তার উপর এই সমস্ত গাড়ি চালকের মর্জিমতো চলে। গাড়ির ভিতর, ছাদ যতক্ষণ না ভর্তি হচ্ছে গাড়ি ছাড়তেই চায় না। প্রতিবাদ করলে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে। ফলে বাধ্য হয়েই প্রাণ হাতে যাতায়াত করি।”
অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে ক্যানিংয়ের এক বাস ও ট্রেকার চালক বলেন, “যে ভাবে বেআইনি রুট পারমিটহীন অটো, ভ্যানের সংখ্যা বেড়েছে সে ভাবে তেলের দাম, যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। কিন্তু ভাড়া বাড়েনি। ফলে লোকসান বাড়ছে। অতিরিক্ত যাত্রী না তুললে ছোটগাড়িগুলির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাচ্ছে না।”
জেলা পরিবহণ সূত্রের খবর ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে রুট পারমিট দেওয়া হয় ৯:১ অনুপাতে। অর্থাৎ ৯ জন যাত্রী ও একজন চালক। বাসের ক্ষেত্রে তা ৩৯:১। জেলা পরিবহণের এক কর্তা জানান, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি রয়েছে। তবে তা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন।” মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, “অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য মাঝেমধ্যে গাড়ি আটকে কেস দেওয়া হয়। ভোটের জন্য নজরদারিতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে এখন ফের কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে।”
মহকুমা শাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “অনেক গাড়ি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে বলে জানা গিয়েছে। জেলা পরিবহণ দফতর ও পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে নজরদারি চালানোর জন্য।”