মরার ভয় না থাক, মড়ার ভয় বিলক্ষণ আছে পুলিশের। মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে শুনলেই আঁতকে উঠছে ফ্রেজারগঞ্জ থানার পুলিশ। ভূতের ভয় নেই, কিন্তু খরচের ভয়!
খাতায় কলমে ছয় মাসেরও বেশি সময় পুলিশ মর্গ চালু হয়েছে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু অটোপসি সার্জেন এবং ডোম নিয়োগ করা যায়নি। তার জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে পুলিশ। দ্বীপ ঘেরা মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার হলেই পুলিশের পকেটে টান। কারণ চারটি ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া দেহ ময়না তদন্তের জন্য ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল, এমনকী কলকাতাতেও পাঠাতে হচ্ছে। তার জেরে নাজেহাল উপকূল থানার পুলিশ। কারণ প্রতিটি দেহের পিছনে খরচ পড়ে যাচ্ছে কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা। অথচ এই বাবদ রাজ্য সরকারের কোনও তহবিল থানাগুলির জন্য বরাদ্দ নেই।
ফ্রেজারগঞ্জ থানা এলাকায় এ বছর জানুয়ারি থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে ১১টি। এর মধ্যে বেওয়ারিশ দেহ ছাড়াও সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জলে ডোবার ঘটনা রয়েছে। থানার এক পুলিশকর্মীর কথায়, “অজ্ঞাতপরিচয় দেহগুলি বিভিন্ন এলাকা থেকে ভেসে আসে। আমাদের থানা এলাকার মধ্যে হলে সেগুলি হাসপাতালে পাঠানোর দায়িত্ব আমাদের উপরে এসে পড়ে। এ দিক-ও দিক থেকে টাকা জোগাড় করে সেগুলি পাঠাতে হয়।” সাধারণত তদন্তকারী অফিসারদের ঘাড়েই এই দায়িত্ব বর্তায়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারি তহবিল বরাদ্দ না থাকায় এই টাকা জোগাড় করার দায়িত্ব পুলিশকেই নিতে হয়। থানার অফিসারদের দাবি, অনেক সময়ে দরিদ্র মানুষজনের আত্মীয় মারা গেলে তাঁরা দেহ পাঠানোর টাকা দিতে পারেন না। তাই দেহ পাওয়া গিয়েছে শুনলেই পুলিশ আতঙ্কে ভোগে।
প্রত্যন্ত কোনও দ্বীপে দেহ আটকে রয়েছে খবর এলে পুলিশের খরচ আরও বাড়ে।
ফ্রেজারগঞ্জ থানা সূত্রে দাবি, গত ২০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া একটি
অজ্ঞাতপরিচয় দেহ এতটাই পচে-গলে গিয়েছিল যে সেটিকে ময়নাতদন্তের
জন্য কলকাতায় পাঠাতে হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়।
পুলিশ সূত্রের দাবি, ডায়মন্ড হারবারে দেহ পাঠানোর জন্য ডোমকেই দিতে হয় প্রায় চার হাজার টাকা। সেই সব পচাগলা দেহ ভাড়া করা মোটরভ্যান ছাড়া পুলিশের জিপে বা অ্যাম্বুল্যান্সে বহন করা সম্ভব হয় না। তাই তার জন্যও আলাদা খরচ লাগে। ফ্রেজারগঞ্জ থেকে নদী পেরিয়ে কাকদ্বীপ হয়ে দেহগুলি আসে ডায়মন্ড হারবার। পুরো ট্রিপে খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। কাকদ্বীপ মহকুমার উপকূল এলাকার মধ্যে বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ ছাড়াও লুথিয়ান দ্বীপ, হেনরি আইল্যান্ড, কালিস্থান, জম্বুদ্বীপ এবং মৌসুনীর মতো এলাকায় এই ঘটনা বেশি ঘটে। বাংলাদেশের দিক থেকেও অনেক দেহ ভেসে আসে।
প্রত্যন্ত কোনও দ্বীপে দেহ আটকে রয়েছে খবর এলে পুলিশের খরচ আরও বাড়ে। ফ্রেজারগঞ্জ থানা সূত্রে দাবি, গত ২০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া একটি অজ্ঞাতপরিচয় দেহ এতটাই পচে-গলে গিয়েছিল যে সেটিকে ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতায় পাঠাতে হয়েছিল। তার জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এসডিপিও (কাকদ্বীপ) পারিজাত বিশ্বাস বলেন, “একটি পরিকাঠামোর মধ্যেই পুলিশ কাজ করে। তবে খরচ-খরচার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।”
কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গ রয়েছে। কিন্তু নতুন বিভাগ বলে সেখানে অটোপসি সার্জেন নেই, ডোমও নেই। তাই বাধ্য হয়েই এলাকার সমস্ত দেহ পাঠাতে হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার এবং কলকাতায়। এ প্রসঙ্গে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন বিভাগ বলে এখনই সার্জেন পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা রয়েছে। কারণ নিয়োগ হয়নি। বাড়ি নির্মাণেরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে গঙ্গাসাগর মেলার আগে এই বিভাগ পুরোপুরি কাজ শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।