ট্রলারে করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে রবিবার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ১৫ জন মত্স্যজীবী। বুধবার ভোরে কাকদ্বীপ থেকে দু’টি ট্রলার পাঠিয়ে সাগরের লাইটহাউসের কাছ থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
কাকদ্বীপ মত্স্য উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানার পর ওঁদের উদ্ধারের জন্য সব দফতরে জানাই। প্রশাসনের তত্পরতায় ওঁদের উদ্ধার করা গিয়েছে।”
কী ভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ওই মত্স্যজীবীরা?
আশা এফ বি বাবা লোকনাথ ট্রলারটির ওই মত্স্যজীবীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১০টায় কাকদ্বীপের কালিন্দী নদী থেকে ইলিশ ধরতে গভীর সমুদ্রে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। প্রায় ছ’ঘণ্টা ট্রলার চালানোর পরে গভীর সমুদ্রে গিয়ে জাল পাতেন। হঠাত্ পশ্চিম দিক থেকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। জাল গুটিয়ে নিয়ে উপকূলে ওঠার জন্য চেষ্ট শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু তখন জালের কিছুটা অংশ পাখায় জড়িয়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। মাঝিও ব্যাপারটি সামলাতে পারেনি। ফলে পূর্বদিকে ভাসতে ভাসতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে চলে ট্রলারটি। কাকদ্বীপ মত্স্যজীবী ইউনিয়নের সঙ্গে ওয়্যারলেস যোগাযোগও কেটে যায়।
কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর গ্রামের বাসিন্দা গোপাল দাস ছিলেন ওই ট্রলারটিতে। তাঁর কথায়, “তখন বিকেল সাড়ে ৫টা। দেখি, আকাশ কালো করে মেঘ জমেছে। একটু পরেই শুরু হল ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। ট্রলারটা দুলছিল। মনে হচ্ছিল, উল্টে যাবে। দেরি না করে জাল গোটাতে শুরু করি আমরা। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপত্তি বাধল। পাখায় জাল জড়িয়ে ইঞ্জিন বিগড়ে গেল” চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ এখনও স্পষ্ট তাঁর।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেই কাকদ্বীপ মত্স্যজীবী ইউনিয়ন মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগযোগ করে। ট্রলারের মালিক মেঘনাথ দাস বলেন, “রবিবার ভোর থেকে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর কাকদ্বীপ মত্স্য উন্নয়ন সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করি।” খবর যায় হলদিয়ায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে। সোমবার সকালে উপকূলরক্ষী বাহিনীর হেলিকপ্টার ট্রলারের খোঁজ শুরু করে। বিকেলেই গভীর সমুদ্রে ট্রলারটির সন্ধান পাওয়া যায়। ওয়ারলেসে মাঝির সঙ্গে যোগাযোগ করে কপ্টারটিকে অনুসরণ করতে বলা হয় তাঁদের।
ইতিমধ্যে অবশ্য ইঞ্জিনটি কোনও রকমে সারিয়ে নিয়েছিলেন মত্স্যজীবীরা। তাই অনুসরণ করতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু গতি একদমই ছিল না। ধীরে ধীরে কেঁদো দ্বীপের কাছে পৌঁছন তাঁরা। উপকূল রক্ষী বাহিনী জাহাজ পাঠিয়ে ট্রলার টেনে আনার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তখন আবার সমুদ্রের ঢেউয়ে জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় ট্রলারটির সামনের দিক। তত ক্ষণে অবশ্য ট্রলারটি পৌঁছিয়ে গিয়েছে সাগর দ্বীপের লাইটহাউসের কাছে। বুধবার ভোরে কাকদ্বীপ থেকে দু’টি ট্রলার গিয়ে তাঁদের কালিন্দী নদীর কাছে টেনে আনে।
গোপালবাবুর কথায়, “ট্রলারে খাবার মজুত ছিল। কিন্তু এত ভয় পেয়েছিলাম যে সেই খাবার মুখে দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের কারওর ছিল না। শুধু প্রার্থনা করছিলাম যাতে সকলে প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারি।”
ওই ট্রলারের মাঝি জয়ন্ত দাসের অভিযোগ, “আগে থেকে আমরা সরকারি ভাবে দুর্যোগের পূর্বাভাস পাই না। উপকূল রক্ষীবাহিনীর দফতর সেই হলদিয়ায়। কোনও দুর্ঘটনা হলে উদ্ধারে অনেক সময় লেগে যায়।” তাঁর দাবি, সাগরদ্বীপে ওই দফতরটি হলে সুবিধা হয়। এ ছাড়াও মত্স্যজীবীদের জন্য অবিলম্বে লাইফ জ্যকেটের ব্যবস্থা করা দরকার বলে দাবি তাঁর। এই প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “ওদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। বিভাগীয় দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়গুলি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”