‘দুর্বৃত্ত’ ছাগলকে নিয়ে থানায় হাজির হলেন জমির মালিক

দোষের মধ্যে, কচরমচর করে মনের আনন্দে গাছের ক’খানা পাতা চিবিয়ে খেয়েছিল সে। ছাগলের জানার কথাও নয়, সেই গাছ বেড়ে উঠেছে কার জমিতে। কিন্তু সে কারণেই জুটল বেদম মার। ‘অনুপ্রবেশকারী’ ধরে সোজা থানায় হাজির হলেন জমির মালিক। বুধবার বসিরহাট থানায় এই ঘটনায় থতমত খেয়ে যান পুলিশ অফিসারেরাও। ছাগলের এ হেন অপরাধে ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের কোন ধারায় মামলা দায়ের করা যায়, তাই শুরু হয়ে যায় ভাবনা-চিন্তা। ছাগলকে গারদে পুরবেন, নাকি খোঁয়াড়ে তাই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০০:০৫
Share:

দোষের মধ্যে, কচরমচর করে মনের আনন্দে গাছের ক’খানা পাতা চিবিয়ে খেয়েছিল সে। ছাগলের জানার কথাও নয়, সেই গাছ বেড়ে উঠেছে কার জমিতে। কিন্তু সে কারণেই জুটল বেদম মার। ‘অনুপ্রবেশকারী’ ধরে সোজা থানায় হাজির হলেন জমির মালিক।

Advertisement

বুধবার বসিরহাট থানায় এই ঘটনায় থতমত খেয়ে যান পুলিশ অফিসারেরাও। ছাগলের এ হেন অপরাধে ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের কোন ধারায় মামলা দায়ের করা যায়, তাই শুরু হয়ে যায় ভাবনা-চিন্তা। ছাগলকে গারদে পুরবেন, নাকি খোঁয়াড়ে তাই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। ছুটে আসে সিভিক পুলিশ। ‘অপরাধী’ ছাগল দেখতে ভিড় জমে যায় থানা চত্বরে।

ছাগল নিয়ে এ ধরনের টানাপোড়েন মুর্শিদাবাদ-মালদার মতো জেলায় আকছার ঘটলেও বসিরহাট থানায় ছাগলকে পাকড়াও করে এনে বিচার চাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। দুপুরের দিকে দড়ি বাঁধা ছাগল টানতে টানতে নুর ইসলাম সর্দার সোজা ঢুকে পড়েন থানায়। একেবারে ডিউটি অফিসারের ঘরে। ছাগল দেখে লাফিয়ে ওঠেন পুলিশ কর্তা। ছাগল নিয়ে ঘরে ঢোকার জন্য বকাবকি করতে থাকেন নুরকে। ছাগল বাইরে রেখে আসার হুকুম দেন। কিন্তু বসিরহাটের জিরাফপুরের মাঝেরহাটি গ্রামের বাসিন্দা নুর বলতে থাকেন, “স্যার, ছাগলটা বড় বেয়াড়া। অনেক দিন থেকে সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে গাছ-গাছালি খেয়ে বড় ক্ষতি করছে হুজুর। ওকে আর ওর মালিককে একটু কড়কে না দিলেই নয়। ভবিষ্যতে যাতে ওরা ছাগল সামলে রাখে।”

Advertisement

তত ক্ষণে অবশ্য থানায় ছাগল দেখার ভিড় জমতে শুরু করেছে। ডিউটি অফিসারের ঘরের জানলা-দরজা দিয়ে চলছে উঁকিঝুকি। কেউ কেউ আবার নুর ইসলামের কাণ্ড দেখে হেসে খুন। কিন্ত তাতে গুরুত্ব দেওয়ার পাত্র নন নুর।

পুলিশ কর্তার হাতে-পায়ে ধরার জোগাড় করে বলতে থাকেন, “হুজুর এই ছাগল আর তার সঙ্গীরা আমার অনেক টাকার চারা গাছ খেয়ে নষ্ট করেছে। ওদের ছাড়বেন না।” ছাগলের গায়ের গন্ধ আর সহ্য করতে পারছিলেন না পুলিশ কর্মীরা। ধমক-ধামক খেয়ে নুর অবশেষে থানা চত্বরের মধ্যে ছাগল বেঁধে ফের ডিউটি অফিসারের ঘরে ঢোকেন।

পুলিশকে তিনি জানান, চড়া সুদে কয়েক হাজার টাকা ধার করে ৬ বিঘা জমিতে আম, কাঁঠাল, লিচু, সবেদা গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। জমি বেড়া দিয়ে ঘিরেও দেন। কিন্তু প্রতিবেশি আবসার গাজির ছাগলগুলো বেড়ার ফাঁক গলে সেই সব ছোট ছোট চারা গাছ খেয়ে যাচ্ছে।

বার বার বলা সত্ত্বেও নিজের ছাগল নিজের দায়িত্বে রাখার কোনও উদ্যোগই নেই আবসারের। নুরের কথায়, “তক্কে তক্কে ছিলাম। ৪-৫টা ছাগল ঢুকতেই তাড়া করি। অনেক চেষ্টায় এই একটাকে পাকড়াও করেছি। এটা আবার বড় ধেড়ে। হেঁটে থানায় আসতে রাজি হচ্ছিল না বলে ৪০ টাকা দিয়ে ভ্যান রিকশা ভাড়া করে এনেছি।”

নুর ইসলাম যখন থানার ঘরে ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন, সে সময়ে চিৎকার জুড়ে দেয় বাইরে বাঁধা ছাগলটি। তা দেখতে হুটোপুটি পড়ে যায়। ছাগলের চিৎকার শুনে ঘর থেকে পুলিশ কর্তা হাঁক পাড়েন, “ছাগলটার খিদে পেয়েছে বলে মনে হয় হাঁক দিচ্ছে! ওরে সিভিক পুলিশগুলো গেলো কোথায়? কয়েকটা গাছের পাতা দে ওকে খেতে।” ছাগলের প্রতি হুজুরের মন পড়েছে বলে খুশি হন নুর ইসলাম। বলেন, “সেই সকাল থেকে এতোটা পথ পেরিয়ে তবে থানায় এসেছি। তাই বোধহয় খিদে পেয়েছে ছাগলের। পাতা তো জোগাড় হল, কিন্তু আমার কী হবে? আমার একমাত্র সম্বল নিজের হাতে গড়া গাছগুলোর কী হবে?”

তত ক্ষণে বিভিন্ন অভিযোগ করতে আসা মানুষ আজব কাণ্ডকারখানা দেখতে কাজ ভুলে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে অনেক চিন্তা করে মাথা চুলকে নুর ইসলামকে বাড়ি যেতে বলে পুলিশ অফিসার বলেন, “দেখো আবার রেগে গিয়ে রাস্তায় ছাগলটাকে মেরো না যেন। মনে রেখো, পশু মারাটাও কিন্তু অপরাধ। তবে আমরা তদন্ত করে দেখছি, কী করা যায় এ ব্যাপারে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement