তফসিলি জাতি, উপজাতিদের জাল শংসাপত্র চক্রের হদিস পেল পুলিশ। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসকের দফতরের এক প্রভাবশালী কর্মী ওই চক্রের মাথা বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি দফতরের আরও কিছু কর্মীদের কাজে লাগিয়ে ওই চক্র ফেঁদে বসেছিলেন। পুলিশের দাবি, ওই কর্মী তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতা। তিনি সপ্তাহ খানেক হল অফিসে আসছেন না। তাঁর খোঁজ করছে পুলিশ। চক্রের বাকিদেরও সন্ধান চলছে।
গত কয়েক দিন আগে ঘুঁটিয়ারি শরিফের এক কলেজ ছাত্র ডাকযোগে ক্যানিং থানায় জাল শংসাপত্র সংক্রান্ত অভিযোগ জানান। পরে মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্যও ক্যানিং থানায় একই মর্মে আরেকটি অভিযোগ জানান। তদন্তে নেমে পুলিশ বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ গ্রামের বাসিন্দা জ্ঞানেন্দ্রনাথ নস্কর এবং জীবনতলার রবীন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা আজিজুল পৈলানকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে প্রায় শ’পাঁচেক জাল শংসাপত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তফসিলিদের হাতে শংসাপত্র দিতে এবং ভুয়ো শংসাপত্র আটকাতে ব্লকে ব্লকে শিবির করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে সব বন্ধ। ইদানীং অভিযোগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে মিলছে না শংসাপত্র। দিনের পর দিন হয়রান হচ্ছেন প্রাপকেরা। অভিযোগ, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরের কর্মীরাই ফেঁদে বসছেন প্রতারণার জাল। বহু মানুষ হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে যার শিকার হচ্ছেন।
কেমন ছিল প্রতারণার জাল?
প্রশাসন সূত্রের খবর, শংসাপত্র পাওয়ার জন্য ব্লক অফিস থেকে ফর্ম তুলে পূরণ করতে হয়। ওই ফর্মের সঙ্গে আবেদনকারী বা তার অভিভাবকের ভোটার কার্ড, ১৯৭১ সালের আগে থেকে ভারতে বসবাসের প্রমাণ স্বরূপ জমির দলিল বা পরচা, বিধায়ক বা সাংসদের শংসাপত্র এবং পরিবারের কোনও সদস্যের এসসি বা এসটি শংসাপত্রও জমা দিতে হয়। পরিবারের সদস্যদের ওই শংসাপত্র না থাকলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে এফিডেভিট করিয়ে আনতে হয়।
জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, নথি-সংক্রান্ত এই ধরনের সমস্যা সমাধানের দাবিতে কেউ মহকুমাশাসকের দফতরে গেলে ওই প্রভাবশালী কর্মী সুকৌশলে তাঁদের পাঠিয়ে দিতেন ক্যানিং-১, ২, বাসন্তী ও গোসাবা এলাকায়। সেখানে তাঁর নিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রতি শংসাপত্র পিছু প্রাপকের সঙ্গে ৫-৬ হাজার টাকায় রফা করত। চারটি ব্লক এলাকায় এই কাজের জন্য তিনি জ্ঞানেন্দ্রনাথ ও আজিজুল-সহ চার জন দালালকে নিয়োগ করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে সপ্তাহে লক্ষাধিক টাকা আদায় হত। এই কাজের জন্য মহকুমাশাসকের রবার স্ট্যাম্প ব্যবহার ও সই নকলও তিনি করতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরে আমার কাছে এ নিয়ে অভিযোগ আসছিল। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে সমস্ত ঘটনার তদন্ত করতে বলি।”