গ্রামে ফেরার পরে। —নিজস্ব চিত্র।
সাগরপার থেকে পদক জিতে রাজ্যের মুখ আলোয় ভরিয়ে দিলেও দেশে ফেরার পরে অন্ধকার পেরিয়েই ঘরে ফিরতে হল সাকিনা খাতুনকে।
বুধবার বেলা সাড়ে চারটে নাগাদ দমদমের নেতাজি সুভাষ বিমানবন্দরে নামার পরে বসিরহাটের কোড়াপাড়া গ্রামে বাড়ি পৌঁছতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। দমদমে তাঁকে আনতে গিয়েছিলেন বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক এ টি এম আব্দুল্লা রনি, দিলীপ মজুমদার, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন বিশ্বাস প্রমুখ। সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ির কাছে আসতেই সাকিনাকে দেখতে গ্রাম ভেঙে পড়ে। অন্ধকারে কাদা প্যাচপ্যাচে রাস্তায় কয়েকশো মানুষ মিছিল করে বাড়ি নিয়ে যান সাকিনাকে। রাস্তার চারপাশে আম, কলা আর বাঁশগাছের সারি। গ্রামের রাস্তায় আলো নেই। সাকিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে টুনি বাল্ব দিয়েই বাড়ির বারান্দা সাজানো হয়েছিল।
বাড়িতে ঢুকে মাকে দেখে কেঁদে ফেলে সাকিনা। বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে কমনওয়েলথে সদ্য ব্রোঞ্জজয়ী সাকিনা খাতুন বলে, ‘‘তোমাদের কষ্টের দাম দিতে পেরেছি আমি।” মা নুরজাহান বিবি অবশ্য তখন মেয়েকে মিষ্টি খাওয়াতে ব্যস্ত। গ্রামের মানুষ কেউ ফুল দিয়ে, কেউ মিষ্টি খাইয়ে সাকিনাকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
গ্রামের মানুষের এত ভালবাসা দেখে আঁচলে চোখ মুছছিলেন তার বৌদি সাহিদা বিবি। মা নুরজাহান বলেন, “কখনও তেমন ভাল করে খাওয়াতে পারিনি মেয়েটাকে। আজ ওর জন্য সজনে শাক আর তেলাপিয়ার ঝোল রেঁধেছি।” বাবা সিরাজুল গাজি বলেন, “ছোট থেকে বরাবরই মেয়েটা একটা কিছু করে গ্রামের আর দেশের নাম উজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছিল। আজ ও খানিকটা সফল হল।”
তবে সাকিনার কোনও আত্মতৃপ্তি নেই। সফল হওয়ার খিদে যার রয়েছে, সে কি কখনও থেমে যেতে পারে! এ বার তার লক্ষ্য এশিয়াড। দৃপ্ত মুখে জানাল সে।