শোকার্ত: বরুণের (ইনসেটে) পরিবার। নিজস্ব চিত্র
ব্যবধানটা মাত্র এক সপ্তাহের। ফের বাঘের আক্রমণে সুন্দরবনে প্রাণ গেল এক যুবকের। দু’টি ঘটনার মিলও অনেক।
গত মঙ্গলবার বাঘের থাবা থেকে স্বামীকে ছাড়িয়ে এনেও বাঁচাতে পারেননি চিলামারির সন্ধ্যা মণ্ডল। সোমবার রাতেও পিরখালি জঙ্গলে ছেলে বরুণ বালাকে (৩২) বাঘের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন সুশীল বালা। কিন্তু তাঁরা যখন ভোরে ঝড়খালি পৌঁছন, ততক্ষণে লড়াই থেমে গিয়েছে জখম বরুণের।
পুলিশ ও বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়খালির ৩ নম্বর গ্রাম থেকে গত বুধবার বাবা, ভাই ইন্দ্রজিৎ ও স্থানীয় এক যুবক পবিত্র শিকদারের সঙ্গে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন বরুণ। মঙ্গলবারই ফেরার কথা ছিল তাঁদের। ইন্দ্রজিৎ জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ সুন্দরবনের পিরখালি ২ জঙ্গলের ঘুঘুর খাল এলাকার খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরার সময় একটি বাঘ চুপিসাড়ে এসে আচমকা বরুণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঘটি বরুণকে নিয়েই খাঁড়ির জলে পড়ে যায়। ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে নৌকা। এরপরেই সুশীলের চোখে পড়ে ছেলেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বাঘ।
নৌকা থেকে বাঁশ, বৈঠা, লাঠি নিয়ে সকলেই বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাঘে-মানুষে লড়াই চলে। সকলে মিলে বাঘটিকে পেটাতে শুরু করেন। বেগতিক বুঝে শিকার ছেড়ে হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে বাঘটি। রক্তাক্ত অবস্থায় বরুণকে নৌকাতে তুলে নিয়ে তড়িঘড়ি গ্রামের দিকে রওনা দেন সকলে। প্রায় সাত ঘণ্টা দাঁড় বেয়ে মঙ্গলবার ভোরে ঝড়খালিতে পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু তখন আর প্রাণ ছিল না বরুণের। রাতেই লড়াইয়ে হার মানেন তিনি।
সুশীল বলেন, “বাঘের মুখ থেকে যখন ছাড়িয়ে নিয়ে এলাম, তখনও ছেলে কথা বলছিল। গলা, ঘাড় দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। গামছা দিয়ে বেঁধেও রক্ত বন্ধ করতে পারিনি। বাঁচাতে পারলাম না ছেলেটাকে।’’ এ দিন সকালে গ্রামে দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বরুণের গোটা পরিবার। দুই সন্তান নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন বরুণের স্ত্রী অঞ্জলি।
গত মঙ্গলবার সুন্দরবনের ঝিলা ২ নম্বর জঙ্গলের চিলমারি খালের কাছে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় দুর্গাপদ মণ্ডলের (৫৫)। নৌকার বৈঠা দিয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করেও স্বামীকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী সন্ধ্যা। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে।
প্রাণহানি সত্ত্বেও জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরা থেকে বিরত হচ্ছেন না মৎস্যজীবীরা। বন দফতরের দাবি, বাড়তি রোজগারের আশায় বারে বারে সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় মাছ, কাঁকড়া ধরার জন্য ঢুকে পড়ছেন মৎস্যজীবীরা।
সুশীল বলেন, “জঙ্গলে না গেলে খাব কী? এই এলাকায় কোনও কাজ নেই। পেট চালানোর জন্য ছোটবেলা থেকে মাছ-কাঁকড়া ধরাই তো শিখেছি!’’
তাঁদের দাবি, সরকারি অনুমতিপত্র নিয়েই সকলে জঙ্গলে গিয়েছিলেন। তবে যে এলাকায় তাঁরা মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন সেই এলাকায় প্রবেশের অনুমতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে
বন দফতর।