Religion

চাকরির নথিতে ‘নাস্তিক’ লেখার দাবি, শিক্ষা দফতরে চিঠি শিক্ষিকার

তা-ও যদি না-হয়, তবে ফর্মে ধর্মের জায়গা পূরণ ‘ঐচ্ছিক’ করতে হবে।

Advertisement

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০০:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পদবি ওঁর কাছে ‘ধর্মচিহ্ন’ ছাড়া আর কিছু নয়। তাই মেয়ের নামের সঙ্গে পদবি জোড়েননি দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির শেরপুর রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শর্মিলা ঘোষ। এ বার তিনি শিক্ষা দফতরে চিঠি পাঠিয়ে তিনি দাবি করেছেন, চাকরি সংক্রান্ত সমস্ত নথিতে ধর্মের জায়গায় ‘নো রিলিজিয়ন’ বা ‘না-ধার্মিক’ লেখার সুযোগ তাঁকে দিতে হবে। একান্তই তা সম্ভব না-হলে, ফর্মের ওই জায়গায় ‘নাস্তিক’ অথবা ‘মানবিকতা’ লেখার সংস্থান থাকতে হবে নথিতে। আর তা-ও যদি না-হয়, তবে ফর্মে ধর্মের জায়গা পূরণ ‘ঐচ্ছিক’ করতে হবে।

Advertisement

শর্মিলা বলেন, ‘‘এখন চাকরি সংক্রান্ত সমস্ত নথি এবং ফর্মে ধর্মের জায়গায় আমাকে হিন্দু অথবা ‘আদার্স’ লিখতে হয়। এই ‘আদার্স’-এর অর্থও কোনও না কোনও ধর্ম। কিন্তু আমি কোনও ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ নই। তাই ফর্মের ওই জায়গায় আমাকে না-ধার্মিক, মানবিকতা অথবা নাস্তিক লেখার সুযোগ দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে, ধর্মের জায়গা পূরণ করার বিষয়টি ঐচ্ছিক করতে হবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘বছরের পরে বছর ধরে ওই ফর্মগুলিতে ধর্মের জায়গায় আমাকে হিন্দু অথবা আদার্স লিখে যেতে হচ্ছে। অথচ আমি প্রাতিষ্ঠানিক কোনও ধর্মপালন করি না। আমি আপাদমস্তক নাস্তিক এবং না-ধার্মিক।’’

শর্মিলা ওই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন শিক্ষা দফতরের কমিশনার, দফতরের সচিব, এবং জেলা স্কুল পরিদর্শককে। চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং নিজের স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিউদ্দিন আহমেদকে। ঘটনাচক্রে রফিউদ্দিন আবার শর্মিলার স্বামী। রফিউদ্দিন বলেন, ‘‘উনি ধর্মাচরণ করেন না। আমিও করি না। ওঁর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। শিক্ষা দফতরে একই আবেদন আমিও জানাব বলে ভাবছি।’’জেলা স্কুল পরিদর্শক প্রদ্যোৎ সরকারের বক্তব্য, ‘‘আমি ওই শিক্ষিকার আবেদনপত্র ই-মেল মারফত পেয়েছি। কিন্তু এই বিষয়টি আমার এক্তিয়ারে পড়ে না। তাই আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এটি রাজ্য সরকারের বিষয়। যদি কিছু করার থাকে, রাজ্য সরকার বা শিক্ষা দফতর করতে পারে।’’

Advertisement

শর্মিলা বলেন, ‘‘বেতন-সহ নানা বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়। ফর্ম ছাড়াও শিক্ষা দফতরের পোর্টালেও চাকরি সংক্রান্ত অনেক বিষয় পাঠাতে হয়। সর্বত্রই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমাকে ধর্মের জায়গাটি পূরণ করতে হয়। অথচ আমি বাড়িতে বা অন্য কোথাও ধর্মাচরণ করি না। ধর্মীয় কোনও রীতিও মানি না। সেই কারণেই আমি ওই দাবির কথা জানিয়েছি দফতরকে।’’

নামের পাশে পদবির উল্লেখ নিয়েও তাঁর অবস্থান পরিষ্কার। শর্মিলার সংযোজন: ‘‘কেউ মানুক বা না-মানুক, এটা বাস্তব যে, পদবি দেখে মানুষের ধর্ম চেনা যায়। পদবিকে তাই আমি ধর্মচিহ্ন বলেই মনে করি। এই কারণে আমি মেয়ের নামের পাশে কোনও পদবির উল্লেখ করিনি।’’ শর্মিলার মেয়ের নাম ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’। স্কুল-সহ সব নথিতে এটাই তার নাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement