এত নির্দল প্রার্থী কেন, দুশ্চিন্তায় তৃণমূল

জেলায় জেলায় গোঁজ প্রার্থী নিয়ে জেরবার তৃণমূল। কোথাও ভোটের টিকিট না পেয়ে অন্য এক গোষ্ঠী নির্দল হিসাবে দাঁড় করিয়েছে কাউকে। কোথাও আবার ভোটের অনেক আগে থেকে প্রার্থী হিসাবে যে সব নাম ভেসে বেড়িয়েছে হাওয়ায়, তাঁরা শেষমেশ টিকিট না পাওয়ায় নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে বসেছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঠিক আগে, যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে তৃণমূল শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৫২
Share:

প্রচারের ফাঁকে তখন বিশ্রাম। —নিজস্ব চিত্র।

জেলায় জেলায় গোঁজ প্রার্থী নিয়ে জেরবার তৃণমূল। কোথাও ভোটের টিকিট না পেয়ে অন্য এক গোষ্ঠী নির্দল হিসাবে দাঁড় করিয়েছে কাউকে। কোথাও আবার ভোটের অনেক আগে থেকে প্রার্থী হিসাবে যে সব নাম ভেসে বেড়িয়েছে হাওয়ায়, তাঁরা শেষমেশ টিকিট না পাওয়ায় নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে বসেছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঠিক আগে, যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে তৃণমূল শিবিরে।

Advertisement

ব্যারাকপুর মহকুমায় ১২টি পুরসভার ৪০৬টি ওয়ার্ডের জন্য নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ২১৬ জন। এর মধ্যে শুধু গাড়ুলিয়াতেই ৩৭ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ভাটপাড়ায় ২১ জন নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। নৈহাটিতে ১৮ জন, হালিশহরে ৯ জন এবং কাঁচরাপাড়ায় ৫ জন নির্দলের হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন।

ব্যারাকপুরে শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দল নতুন ঘটনা নয়। ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ এবং তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের গোষ্ঠীর মধ্যে বহু আকচা-আকচির সাক্ষী উত্তর ২৪ পরগনার এই মহকুমা। যা ধামাচাপা দিতে অতীতে অন্যান্য ভোটের আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু একদা দলের ‘নম্বর টু’ মুকুলবাবুর সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব বাড়তে বাড়তে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ব্যারাকপুরে মুকুল-বিরোধী শিবির ধরেই নিয়েছিল, এ বার পুরভোটের টিকিট পাওয়ার দৌড়ে তারা অনেকটাই এগিয়ে গেল। সেই মতো তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায় ভোটের বহু আগে থেকেই।

Advertisement

কিন্তু দলনেত্রী শেষমেশ মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুকেই পুরভোটে বীজপুর ও হালিশহরের দায়িত্ব দেন। রাজ্যের অন্য প্রান্তের মতোই ব্যারাকপুরের ক্ষেত্রেও ঠিক হয়, মহকুমার পুরসভাগুলির ক্ষেত্রে জয়ী কাউন্সিলরদেরই টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ফলে কাঁচরাপড়ার কাউন্সিলর হিসাবে শুভ্রাংশু নিজে যেমন টিকিট পান, তেমনই মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আরও বহু জয়ী কাউন্সিলরও ভোটের টিকিট পেয়েছেন।

এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিরোধী শিবিরের মধ্যে। যার জেরে একেকটি আসনে একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মী নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে দলেরই একটি সূত্রের খবর। দলের ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, এঁদের অনেকেরই আশা ছিল, মুকুল রায়ের প্রভাব খর্ব হওয়ায় পুরভোটে ভাগ্য খুলতে চলেছে এঁদের। কোন্দল থামাতে শেষ পর্যন্ত আসরে নামতে হয়েছে জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে, তাঁরই মধ্যস্থতায় হাতে হাত ধরে না হলেও, একই দিনে কাছাকাছি সময়ে অর্জুন ও শুভ্রাংশু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দু’জনে এ নিয়ে মন্তব্যও করছেন না প্রকাশ্যে।

জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “কার কাকে নিয়ে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকল কি থাকল না, তা দলের কাছে বড় নয়। মানুষের সঙ্গে থাকাটাই বড় কথা। শৃঙ্খলাপরায়ণ ভাবেই নির্বাচনে লড়তে হবে।”

নির্দল প্রার্থীরা শেষমেশ কার ভোট কাটবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে অন্য দলগুলির মধ্যেও। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এখনও পেরোয়নি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে বলে আশাবাদী শাসক দল। পুরভোটে বিজেপির উত্থান নিয়ে যত জল্পনা ছিল, বাস্তবে তা যে হওয়া মুশকিল তার ইঙ্গিত মিলছে ইদানীং। রাজ্য বিজেপির অফিসের সামনেও পৌঁছচ্ছে দলীয় কোন্দল। ব্যারাকপুর মহকুমাও তার ব্যতিক্রম নয়। তৃণমূল সব ক’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু বিজেপি এ বার সব ওয়ার্ডে প্রার্থীই দিতে পারেনি। বিজেপির মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে সাকুল্যে ২৮২টি। সেখানে ভাঙা বাজারেও কংগ্রেসের প্রার্থী সংখ্যা ২৯৩। বিএসপি এবং সিপিআইএমএল দুই দলই ৯ জন করে প্রার্থী দিয়েছে।

বামফ্রন্টই যে এ বার তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছে, তা বারবারই বলছে তৃণমূল শিবির। ২০১০ সালের পুরভোট পর্যন্ত ‘বাম দুর্গ’ হিসাবে পরিচিত ছিল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের। এ বার পুরভোটে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে ৩৪৮টি আসনে। সিপিআই দিয়েছে ৩১টিতে, ফরওয়ার্ড ব্লক দিয়েছে ১০টিতে এবং আরএসপি প্রার্থী দিয়েছে ১২টি আসনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement