দাপট: মাইকের ব্যবহার সব দিকেই। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
শব্দ দূষণের কারণে পথে বেরিয়ে নাজেহাল হওয়াটা বনগাঁ শহরের মানুষের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে গিয়েছে।
শহরের রাস্তায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোনের খুঁটিতে চোঙা বাঁধা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছে
মাইক। অনুমতি নিয়ে হোক বা না নিয়ে— দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে এই চোঙার তাণ্ডব। যার জেরে রাস্তায় বেরিয়ে লোকে গাড়ির হর্ন
ঠিকমতো শুনতে পান না। মোবাইলের রিং টোন শোনা যায় না। যদি বা ফোন ধরা যায়, গলি খুঁজে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়। টানা শব্দের দাপটে প্রবীণ নাগরিকেরা অসুস্থ বোধ করেন। গাড়ি চালাতেও সমস্যা হয় বলে জানালেন অনেকে।
বছরভর মাইক বাজে নানা কারণে। শীতের মরসুম শুরু হতেই তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পর পর নানা অনুষ্ঠান লেগেই আছে। এক একটি অনুষ্ঠানের জন্য গোটা শহর জুড়ে চোঙা বাঁধা হয়, এমন ঘটনাও ঘটে। শুধু অনুষ্ঠানের দিন তো নয়, কয়েক দিন আগে থেকেই মাইকে প্রচার চলে। দিনরাত একই কথা, গানের পুনরাবৃত্তি আরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শহরের ব্যস্ত জায়গাগুলি, যেখানে মাইকের শব্দ বেশি, সেখানে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আড্ডাটুকু বন্ধ অনেকের। শহরের মধ্যে স্কুলেও পড়াশোনা চালাতে সমস্যা হয় বলে জানালেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা। সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। পড়ুয়াদের সমস্যা আরও বেশি। গভীর রাত পর্যন্ত মাইকের হাত থেকে রেহাই মেলে না। মনঃসংযোগে সমস্যা হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক পড়ুয়ার বাবার কথায়, ‘‘রাতে বাড়ি ফিরলে ছেলে প্রশ্ন করে, বাবা মাইকের আওয়াজ কবে বন্ধ হবে। কোনও উত্তর দিতে পারছি না।’’
শহরের কিছু মানুষ শব্দ দূষণ প্রতিরোধ মঞ্চ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার কর্মসূচি পালন করেন। শহরে মিছিল বেরিয়েছে এর আগে। মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলিও হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনের তরফে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘শব্দ দূষণের ফলে মানুষ অসহনীয় যন্ত্রণায় ভোগেন। এর থেকে দ্রুত মুক্তি চাই আমরা। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে যাওয়া, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও অনুষ্ঠানের জন্য হয় তো প্রশাসনের তরফে ৬ চোঙার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তার থেকে অনেক বেশি চোঙা বাঁধা হচ্ছে। তা ছাড়া, ৬৫ ডেসিবেলেল বেশি স্বরে চোঙা বাজলেও তা মাপার মতো পরিকাঠামো পুলিশের নেই। অনেক সময়ে অনুমতি ছাড়াও চোঙা বাজানো হচ্ছে। শব্দ দূষণ শহরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, তা মানছেন পুলিশ কর্তারাও।